সরকারি কার্যক্রম পরিচালনায় ‘গৎবাঁধা চিন্তাভাবনা’ থেকে সচিবদের বেরিয়ে আসতে বলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। সরকারের সব পর্যায়ে সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ করে তা বাস্তবায়নে এগিয়ে যাওয়ার নির্দেশ (মার্চিং অর্ডার) দিয়েছেন তিনি।
সচিবদের উদ্দেশ্যে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, নতুন বাংলাদেশ গড়তে ‘চিন্তার সংস্কার’ করতে হবে। সৃজনশীল উপায়ে জনস্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সরকারি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। একই সঙ্গে দুর্নীতিরও মূলোৎপাটন করতে হবে।
বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে (সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়) ‘সচিব সভায়’ এসব নির্দেশ দেন মুহাম্মদ ইউনূস।
বৈঠক সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দ্রুত পরিকল্পনা তৈরি করে তা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে পাঠাতে সচিবদের নির্দেশ দিয়েছেন মুহাম্মদ ইউনূস। পরিকল্পনা যেন খুবই সংক্ষেপ তবে সময়োপযোগী হয় এমন নির্দেশনাও এসেছে।
গণ-আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের তিনদিন পর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেন মুহাম্মদ ইউনূস। দায়িত্ব নেয়ার পর এটিই তার প্রথম সচিবসভা।
এর আগে নিজের অধীন থাকা মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন প্রধান উপদেষ্টা।
বুধবারের বৈঠকে প্রায় সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক সংক্রান্ত একটি প্রেস ব্রিফ গণমাধ্যমে পাঠিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
এতে দেখা যায়, সচিবদের উদ্দেশ্য বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি বলেছেন, ‘নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য গৎবাঁধা চিন্তাভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে, চিন্তার সংস্কার করে, সৃজনশীল উপায়ে জনস্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সরকারি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সৃষ্ট নতুন বাংলাদেশ নিয়ে বিশ্বব্যাপী যে আগ্রহ, ইতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে, দেশের স্বার্থে তা সর্বোত্তম উপায়ে কাজে লাগাতে হবে।’
ব্রিফে বলা হয়, সরকারের সব পর্যায়ে সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নে এ সময়ে ‘মার্চিং অর্ডার’ দিয়েছেন মুহাম্মদ ইউনূস। সংস্কার কর্মসূচি প্রণয়নে প্রয়োজন অনুযায়ী সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা ও মতামত নেয়ারও তাগিদ দিয়েছেন তিনি।
সচিবসভায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার বৈষম্যহীন মানবিক দেশ গড়ার যে প্রত্যয়, যে ভয়হীন চিত্ত আমাদের উপহার দিয়েছে, তার ওপর দাঁড়িয়ে বিবেক ও ন্যায়বোধে উজ্জীবিত হয়ে আমাদের স্ব স্ব ক্ষেত্রে সততা, নিষ্ঠা, জবাবদিহিতা নিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়তে হবে। দুর্নীতির মূলোৎপাটন করে, সেবা সহজিকরণের মাধ্যমে জনগণের সর্বোচ্চ সন্তুষ্টি অর্জন করতে হবে। সরকারি অর্থের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘সরকারি ক্রয়ে যথার্থ প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে এবং স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিতে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করতে হবে। এবং সৃষ্টিশীল, নাগরিক-বান্ধব মানসিকতা নিয়ে প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার কর্মসূচির সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা দাখিল করবে, যা নিয়মিত মূল্যায়ন ও পরিবীক্ষণ করা হবে।’
দেশে মোট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সংখ্যা ৪১টি। এরমধ্যে প্রধান উপদেষ্টার হাতে আছে মোট ছয়টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এগুলো হলো- মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ; প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়; সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ; খাদ্য মন্ত্রণালয়; জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।
অবশিষ্ট ৩৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের দায়িত্বে আছেন অন্তর্বর্তী সরকারের ২০ জন উপদেষ্টা।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর বিশের অধিক দপ্তরে সচিব পদে রদবদল আনা হয়েছে। আগের সরকারের সময় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া দশ জনের বেশি কর্মকর্তাকে বাদ দেয়া হয়েছে।
প্রশাসনে আগের সরকারের প্রভাব কমাতে আওয়ামী লীগ শাসনামলে ‘বঞ্চিত’ ও বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো পাঁচজন অতিরিক্ত সচিবকে জ্যেষ্ঠ সচিব পদমর্যাদায় প্রশাসনে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বুধবারের বৈঠকে নির্দিষ্ট কোনো এজেন্ডা ছিল না। সার্বিক বিষয়ের খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা এমনটাই ধারণা বিভাগ সংশ্লিষ্টদের।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন এর সভা পরিচালনা করেন।
সভা সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে সংযুক্ত উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার সভায় বক্তব্য রাখেন। সচিবদের মধ্যে ১০ জন সভায় বক্তব্য রাখেন