গত পাঁচ জুলাই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর দেশে একটা শূন্যতা তৈরি হয়েছিল। দেশের ক্রান্তিলগ্নে গঠিত হেয়েছে অন্তবর্তীকালীন সরকার। শপথ নিয়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। নতুন সরকারের জন্য রইল শুভকামনা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের মধ্যদিয়ে সেই শূন্যতা দূর হলো। এখন দেশ থেকে নৈরাজ্য দূর হবে, দেশে শান্তি ফিরবে, শৃঙ্খলা ফিরবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
রাজনৈতিক পালাবদলের ক্রান্তিকালে দেশে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশে হত্যা, হামলা, অগ্নিসংযোগ, লুঠ, ডাকাতির মতো ঘটনা ঘটেছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ যেমন এর শিকার হয়েছে, এর সঙ্গে সাধারণ মানুষও তার শিকার হয়েছে।
দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতি পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। কোথাও আইন প্রয়োগ করতে দেখা যাচ্ছে না। পুলিশকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যাচ্ছে না দেশজুড়ে হামলা–ভাংচুরের ঘটনার সঙ্গে যোগ হয়েছে ডাকাতির ঘটনা। রাজধানীসহ দেশের অনেক স্থানে ডাকাতি হয়েছে। সাধারণ মানুষ আতঙ্কে আছে। আক্ষরিক অর্থেই বহু মানুষকে রাতে জেগে থাকতে হচ্ছে। প্রকাশ্যে দিনেদুপুরেও ডাকাতি হচ্ছে। অনেক স্থানে নাগরিকরা নিজেরা পাহাড়ার ব্যবস্থা করেছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান বলেছেন, মানুষ মানুষকে আক্রমণ করছে। ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে। সম্পদ নষ্ট করছে। নিয়ে যাচ্ছে। অফিস–আদালতে আক্রমণ করছে। সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ করছে। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, আহমদিয়া– সবার ওপর আক্রমণ হচ্ছে। এগুলো হলো ষড়যন্ত্রের অংশ, আমাদের বিষয় না। আমাদের কাজ হলো সবাইকে রক্ষা করা। প্রতিটি মানুষ আমাদের ভাই, আমাদের বোন।
আমরা মনে করি, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজই হবে শান্তি–শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা। প্রতিটি হামলার ঘটনার বিচার করতে হবে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। দেশের মানুষেকে যেন আতঙ্কে দিন কাটাতে না হয় সেই ব্যবস্থা করতে হবে। থানাগুলোতে কয়েকদিন কোনো পুলিশ ছিল না । ইতিমধ্যে কিছু কিছু থানায় পুলিশ সদস্য যোগ দিয়েছে। পুলিশ বাহিনির কাজের পরিবেশ সৃষ্টি করা জরুরি। পুলিশের বিরুদ্ধে মানুষের অনাস্থা তৈরি হয়েছে। তাদের প্রতি জনগণের পুরোপুরি আস্থা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।
প্রশাসন ভেঙে পড়েছে।সর্বস্তরে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে প্রশাসন কোনো কাজই করতে পারছে না। এতে বিঘ্নিত হচ্ছে জনসেবা। প্রশাসনে শৃঙ্খলা ফেরাতে হবে।প্রশাসনের ওপর আস্থা ফেরানো জরুরি।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান বলেছেন, ‘আমার ওপর আস্থা রাখুন, ভরসা রাখেন, দেশে কারও ওপর কোনো হামলা হবে না।’ আমরা তার ওপর আস্থা রাখতে চাই। আইনের শাসন, রাজনৈতিক বা সরকারি প্রভাবমুক্ত পুলিশ প্রশাসনসহ সর্বপরি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে এটাই প্রত্যাশা।