বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি বন্ধের কথা জানিয়েছেন। বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ঘোষণা দেন।
গভর্নর আহসান মনসুর বলেন, “রিজার্ভ থেকে আর কোনো ডলার বিক্রি করা হচ্ছে না। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে এক ডলারও বিক্রি করা হয়নি।”
তিনি আরও বলেন, “বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমার কোনো আশঙ্কা নেই; বরং কিছু ডলার আসতে থাকবে, যার ফলে রিজার্ভ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।”
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিশ্ববাজারে খাদ্য ও জ্বালানির দাম বাড়ায় বাংলাদেশের আমদানি মূল্য বেড়ে যায়। এ পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি শুরু করে, যা গ্রস ৪৮ বিলিয়ন ডলার থেকে রিজার্ভ ২০ বিলিয়নে নামিয়ে আনে। সর্বশেষ ২১ অগাস্টের তথ্য অনুযায়ী, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০.৪৮ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, সদ্য সমাপ্ত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ১২.৬৯ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়েছে। আগের অর্থবছরে এই পরিমাণ ছিল ১৪ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। তবে, গভর্নর মনসুর দায়িত্ব নেওয়ার পর রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি বন্ধ রাখা হয়েছে।
গভর্নর জানান, “ইন্টারব্যাংক মার্কেট থেকে ডলার নিয়ে সোনালী ব্যাংককে সরকারি ঋণপত্র খোলার জন্য দেওয়া হচ্ছে, যাতে পেমেন্ট সময়মতো করা যায়। এছাড়া, পোর্টে আটকে থাকা জাহাজগুলোর সমস্যা সমাধানের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ মিলিয়ন ডলার বাজার থেকে নিয়ে জ্বালানি খাতের এলসি খোলার জন্য দিচ্ছে এবং কৃষিপণ্য আনার জন্য ৩৫ মিলিয়ন ডলার প্রদান করেছে।
ডলারের দরে স্থিতিশীলতা নিয়ে গভর্নর আশাবাদী। তিনি বলেন, “বৈদেশিক মুদ্রার দর স্থিতিশীল থাকলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে।”
সাম্প্রতিক সময়ে ডলারের দর ১২০ টাকার আশেপাশে থাকলেও রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি বন্ধের পর মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে মনে করছেন গভর্নর মনসুর।
তিনি বলেন, “বিশ্ববাজারে তেল ও ভোগ্যপণ্যের দাম কমে আসছে। এর প্রভাব বাংলাদেশে দুই মাস পর পড়বে।”
এছাড়া, তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, আগামী ৮ মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতির হার ৬ থেকে ৭ শতাংশে নামিয়ে আনা গেলে সুদের হারও কমানো সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, অগাস্ট মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১১.৬৬ শতাংশে পৌঁছেছে, যা জুন মাসে ছিল এক অঙ্কের ঘরে।