সালাউদ্দিন তাহলে সরবেন কবে?

0
51

অনেকের মতেই কাজী সালাহউদ্দিন বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ফুটবল তারকা। কিন্তু সংগঠক ও ফুটবল প্রশাসক হিসেবে তাঁরাই হয়তো আবার তাঁকে পাস নম্বরও দিতে রাজি হবেন না।

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি হিসেবে খেলোয়াড়ি জীবনের সেই অবস্থান ধরে রাখতে পারেননি সালাহউদ্দিন। এই পদে ২০০৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত টানা ১৬ বছর দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছেন তাঁর কাছে থাকা প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির মিল ঘটাতে।

ফুটবল ফেডারেশন থেকে সালাহউদ্দিনের পদত্যাগের দাবি উঠেছিল কয়েক বছর আগেই। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সেটি এখন আরও জোরালো। কিন্তু সালাহউদ্দিন যেন সে দাবিকে পাত্তাই দিচ্ছেন না। উল্টো আগামী ২৬ অক্টোবর অনুষ্ঠেয় বাফুফের নির্বাচনে ৫ম মেয়াদে সভাপতি পদে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘নির্বাচন করা আমার আধিকার। নির্বাচনে হেরে গেলে চলে যাব।

নির্বাচন করার অধিকার সবারই আছে। কিন্তু সালাহউদ্দিনের আর বাফুফে সভাপতি পদে নির্বাচন করার মতো অবস্থান আছে কি না, সেটাই প্রশ্ন। কারণ, তাঁর সময়ে সাংগঠনিক ব্যর্থতার সঙ্গে বাফুফের ভাবমূর্তিতেও লেগেছে কালি।

আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে গত বছর এপ্রিলে বাফুফের বিরুদ্ধে ফিফা কড়া ব্যবস্থা নিয়েছে। বাফুফের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম দুই বছর নিষিদ্ধ হয়েছেন। বাফুফের অর্থ কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার অভিযোগে সিনিয়র সহসভাপতি সালাম মুর্শেদীকে ফিফা ১৩ লাখ টাকা জরিমানা করেছে। বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে যা নজিরবিহীন। সালাম অবশ্য রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরপরই বাফুফের সহসভাপতির পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।

বাফুফেতে আর্থিক অনিয়মের অনেক অভিযোগ তুলেছিলেন প্রয়াত সাবেক তারকা ফুটবলার ও সাবেক সহসভাপতি প্রয়াত বাদল রায়। অভিযোগ যে ভিত্তিহীন ছিল না, ফিফার নেওয়া কড়া ব্যবস্থাতেই তা প্রমাণিত। এর দায় সভাপতি হিসেবে সালাহউদ্দিন এড়াতে পারেন না। বাফুফে প্রশাসনিক ও আর্থিক বিষয়ে অস্বচ্ছতার নানা প্রশ্ন তুলে নির্বাহী কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আরিফ হোসেন মুন। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় বাফুফেকে ২০ কোটি টাকার অনুদান দিয়েছিল।

কিন্তু প্রথমবার দেওয়া ১০ কোটি টাকা নিয়মিত নিয়মবহির্ভূতভাবে খরচ করে সমালোচনার মুখে পড়ে বাফুফে। প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক খরচাদির হিসাব বাফুফের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে বলে সাংবাদিকদের অনেকবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সালাহউদ্দিন। কিন্তু তা কথার কথাই রয়ে গেছে।

দেশের কিংবদন্তি ফুটবলার হিসেবে সালাহউদ্দিনের কাছে প্রত্যাশা ছিল অনেক। ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ে দেশকে ১৫০–এর ঘরে আনার আশা দেখিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কোথায় কী? ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ভুটানেরও (১৮২) নিচে। ২১০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮৪। একসময় বাংলাদেশের কাছে ৮ গোল খাওয়া মালদ্বীপও আছে ১৬৩তম অবস্থানে।

অথচ বাংলাদেশের দায়িত্ব নেওয়ার আগে কাবরেরা জাতীয় দল দূরে থাক, কোনো ক্লাবেও কখনো প্রধান কোচের দায়িত্ব পালন করেননি। একমাত্র টম সেইন্টফিট ছাড়া কোনো কোচেরই জাতীয় দলের কোচিংয়ের অভিজ্ঞতা ছিল না। জাতীয় দলের জন্য ভালো মানের কোচ আনার ক্ষেত্রে বাফুফে বরাবরই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে যথাযথ যোগাযোগের অভাবে। বাংলাদেশ জাতীয় দল যেন বিদেশি কোচদের অভিজ্ঞতা অর্জনের পরীক্ষাগার হয়ে দাঁড়িয়েছে!

অথচ জাতীয় দল নিয়ে ব্যস্ততায় অনেক কিছুই উপেক্ষিত থেকেছে। দেশের ফুটবল শক্ত ভিত্তি পায়নি। বাফুফের নিজস্ব একটা একাডেমি হয়নি আজও। ফিফার অর্থায়নে সিলেট বিকেএসপিতে একাডেমি করা হলেও বাফুফের পরিকল্পনাহীনতা আর অব্যবস্থাপনায় কিছুদিন পর সেটি বন্ধ হয়ে যায়। কমলাপুর স্টেডিয়ামে ৫০-৬০ জন ছেলে নিয়ে সম্প্রতি আবাসিক ক্যাম্প চালু করেছে বাফুফে। এটাকে নাম দেওয়া হয়েছে ‘বাফুফের এলিট একাডেমি।’ অথচ একাডেমি শব্দটাই এর সঙ্গে যায় না।

এত বছর বাফুফেতে থেকেও সালাহউদ্দিন পারেননি ক্লাবগুলোকে দিয়ে একাডেমি করাতে। খেলোয়াড় তৈরিতে অনাগ্রহী ক্লাবগুলোকেও সঠিক পথে আনতে পারেননি। খেলোয়াড় আসে জেলা থেকে। সেই জেলা লিগগুলো চরমভাবে অনিয়মিত। ঢাকার পাশের জেলা নায়ায়ণগঞ্জে ছয় বছর ধরে ফুটবল লিগ হয় না। সালাউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন বাফুফে এর কোনো খোঁজও রাখেনি। বাফুফে যেন ঢাকা ফুটবল ফেডারেশন হয়েই রয়ে গেছে!

কাজী সালাহউদ্দিনের কাছ থেকে অনেক কিছুই পেতে পারত বাংলাদেশের ফুটবল। কিন্তু সে প্রত্যাশা বাস্তব হয়ে ধরা দেয়নি। তবু যে তিনি চাইছেন আরও একবার বাফুফের সভাপতির চেয়ারে বসতে, সেটি কেবল বিস্ময়েরই জন্ম দেয়। এত ব্যর্থতার পরও যখন ক্ষমতার প্রতি তাঁর এই মোহ প্রশ্ন জাগায়

সালাহউদ্দিন তাহলে সরবেন কবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here