২০২২ সালের কারিকুলাম বাদ দেওয়া হয়েছে। ১০ বছর আগের পুরনো কারিকুলামেই ফিরে গেছে দেশের শিক্ষাক্রম। এটি সময় উপযোগী করতে চলছে পাঠ্যবইয়ে পরিমার্জন ও পরিবর্ধন। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্র গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন শিক্ষাক্রম বাতিলের উদ্যোগ নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। পুরোনো সৃজনশীল পদ্ধতির শিক্ষাক্রমে রচিত বইগুলো আগামী বছর শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এরই মধ্যে এসব বই সংশোধনের কাজ শুরু হয়েছে। যেসব বইয়ে বিশেষ করে ঐতিহাসিক ঘটনার ক্ষেত্রে অতিরঞ্জিত কোনো তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে সেই অংশটুকু বাদ দেওয়ার উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যেসব বাণী পাঠ্যবইয়ে রয়েছে, সেগুলো মুছে দেওয়া হবে বলে এনসিটিবি জানিয়েছে।
এনসিটিবি সূত্র বলছে, পাঠ্যবই সংশোধনের জন্য শিক্ষা উপদেষ্টার দপ্তর থেকে একটি দল গঠন করা হয়েছে। এই টিমে প্রতিটি বিষয়ের তিন থেকে পাঁচজন বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষক। সবমিলিয়ে পঞ্চাশের বেশি ব্যক্তি পাঠ্যবই সংশোধনের কাজ করছেন।
পাঠ্যবই পরিমার্জন টিমের সদস্য শিক্ষা গবেষক রাখাল রাহা জানান, কিছু কনটেন্টে হয়তো কিছু লেখা বাদ যেতে পারে। তবে কোনো কনটেন্ট পুরোপুরি বাদ যাবে কি না, তা এখনো নিশ্চিত নন।
এই দলের সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন জানান, পাঠ্যবইয়ের কাভারে শেখ হাসিনার কোনো বাণী থাকবে না। এ ছাড়া অতিরঞ্জিত কোনো ইতিহাস থাকলে সেটিও বাদ দেওয়া হবে। এসব পরিবর্তন করে বই পরিমার্জনের কাজ চলছে।
এনসিটিবি সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী বলেন, শিক্ষা উপদেষ্টার দপ্তর থেকে একটি টিম গঠন করে দেওয়া হয়েছে। তারা পাঠ্যবই সংশোধনের কাজ করছে। আশা করি, ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই এই কাজ শেষ হবে। কিন্তু কারিকুলামের বিষয়ে কোনো কমিটি করা হয়নি বলে জানান তিনি।
এনসিটিবির এক সদস্য জানান, ২০১২ সালের বই যেমন ছিল তেমন রাখা তো সম্ভব নয়। অনেক বিষয় ছিল যেটি পরিবর্তন করতে হচ্ছে। সময় উপযোগী হিসেবে প্রস্তুত করতে হচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও এ বিষয়ে ১০ সদস্যের কমিটি তৈরি করেছে। তারাও বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে।
সংযুক্ত হচ্ছে গণঅভ্যুত্থান :
জুলাই ও আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে ঘিরে যে গণঅভ্যুত্থান গড়ে উঠেছিল তার ইতিহাস পাঠ্যবইয়ে সংযুক্ত করা হচ্ছে বলে জানায় আরেকটি সূত্র। তবে সেটি আগামী বছরের পাঠ্যবইয়ে পাওয়া যাবে না। এর জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও এক বছর।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্রটি বলছে, তড়িঘড়ি করে এই ইতিহাস যুক্ত করতে গিয়ে নির্ভুল তথ্য উপস্থাপন করা কঠিন হবে। অনেক কিছু বাদও চলে যেতে পারে। সময় স্বল্পতায় এ বছর এটি করা হচ্ছে না। তবে আগামী বছর এ বিষয়ে এনসিটিবি অবশ্যই কাজ করবে। যা ২০২৬ সালের পাঠ্যবইয়ে শিক্ষার্থীদের পড়ানো হবে।
এ বছর গণঅভ্যুত্থানের বিষয় পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করতে একাধিক পক্ষের মত ছিল। অনেকে আবার এ বিষয়ে জোর দাবিও তোলেন। এ বিষয়ে পর্যাপ্ত গবেষণা ও যাচাই-বাছাই ছাড়া এনসিটিবি তাতে রাজি হয়নি।
জানতে চাইলে এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রিয়াজুল হাসান গণমাধ্যমকে জানান, গবেষণার জন্য সময় ব্যয়, গবেষক নিয়োগ, তথ্য ও পর্যাপ্ত সময় না থাকায় আগামী বছরের পাঠ্যবইয়ে এটি যুক্ত হচ্ছে না। তবে পরের বছর এটি অবশ্যই যুক্ত হবে। সূত্র:জনকণ্ঠ।