Homeরাজধানীজনগণের অংশগ্রহণ যদি না থাকে কোনো সংস্কারই টেকসই হবে না- মির্জা ফখরুল

জনগণের অংশগ্রহণ যদি না থাকে কোনো সংস্কারই টেকসই হবে না- মির্জা ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মতে, ছাত্র রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্তে লাভবান হবে ‘অন্ধকারের মানুষরা’। একইসঙ্গে গণমাধ্যম ও কর্মীরা এখনও চাপে আছে কিনা সে প্রশ্নও তুলেছেন তিনি।

আপনি কিন্তু ‘জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন’ উল্লেখ করে অন্তর্বর্তী সরকারের রাজনৈতিক কাঠামো ব্যবস্থা ‘সংস্কার’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, এ সরকার কাকে নিয়ে করা হবে? ‘রাজনীতিবিদের সঙ্গে কথা’ না বলে কিভাবে করবেন তারা।

তিনি বলেন, ‘আপনি (সরকার) কিন্তু জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন, জনগণের অংশগ্রহণ যদি না থাকে কোনো সংস্কারই টেকসই হবে না। রাজনৈতিক অঙ্গীকার থাকতে হবে, সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আপনি জাতীয়করণ করবেন কি করবেন না, সেটা তো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, আপনি কোনটাকে অগ্রাধিকার দেবেন, হাসপাতাল দেবেন না মেগা প্রকল্প দেবেন, এটা তো রাজনৈতিক অঙ্গীকার, তাই না?’

অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধান সংস্কারে যে উদ্যোগ নিয়েছে তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিএনপি নেতা। তিনি বলেন, ‘সংবিধানে পরিবর্তন করতে হলে আগে মানুষের কাছে জানতে হবে তারা কী রকম পরিবর্তন চায়। সংবিধানের আমূল পরিবর্তন, নতুন সংবিধান করতে হলে আগে গণপরিষদ করতে হবে। গণপরিষদ তৈরি না হলে পরিবর্তন করবেন কিভাবে?’

আইনগত দিকগুলো একদিনে পাল্টে দেয়া যাবে না মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, ‘অমূলক পরিবর্তন করতে চান বা নতুন সংবিধান লিখতে চান সেটা জনগণের রায় নিয়ে হোক। নির্বাচনটা হোক এই নির্বাচনের জন্য যেটুকু সংস্কার করা দরকার, যেমন নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন ইত্যাদি দ্রুত সংস্কার করে নির্বাচনটা করে সেখানে আপনি সব কিছু করতে পারেন। পার্লামেন্টে আপনি সমস্ত প্রয়োজনীয় সংস্কার আনতে পারেন।’

ফখরুল বলেন, ‘এই যে সংস্কারের বিষয়টা এটা কি মানুষকে বাদ দিয়ে হবে? সংস্কার করবেন মানুষের, দেশের, প্রতিষ্ঠানগুলো, তাই না? প্রতিষ্ঠানগুলোকে মানুষ কিভাবে দেখতে চায় সেগুলোর জন্য উচিত ছিল আগে রাজনীতিবিদদের সঙ্গে কথা বলা, তাদের কাছে প্রস্তাব চাওয়া।’

শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) ঢাকার গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে এক প্রশ্নে এসব কথা বলেন তিনি। মির্জা ফখরুল এই মতবিনিময়ে সাংবাদিকদেরকেও একটি প্রশ্ন রাখেন। তিনি বলেন, ‘সব সময় তো আপনারা আমাকে প্রশ্ন করেন, এবার আমি একটা প্রশ্ন করি। আপনাদের ওপর কি আগের মত চাপ আছে? এটা জানতে ইচ্ছা করে। মালিকদের ওপর থেকে আছে কি?’ একজন সংবাদকর্মী বলেন, ‘এখন চাপ নেই।’ ফখরুল বলেন, ‘এটা ঠিক না, চাপ তখনও ছিল, এখনও আছে। আপনারা বলতে চান না।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আপনি অংশীজনদের সঙ্গে কথা বলেন, আপনি অন্যান্য এনজিওদের সঙ্গে কথা বলেন, শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেন, সমাজের সমস্ত পেশার সঙ্গে কথা বলেন, তারপরে রাজনীতিবিদদের সঙ্গে কথা বলেন। এককভাবে আপনি যদি চিন্তা করেন, আমি বিশেষজ্ঞদের দিয়ে করে ওগুলো আমি চাপিয়ে দেব, তা তো মেনে নেব না।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি তো মনে করি ছাত্র রাজনীতি যদি সুস্থ না হয়, দেশের রাজনীতি সুস্থ হবে না। আর ছাত্র রাজনীতি থেকে যদি নেতৃত্ব তৈরি না হয় তাহলে জাতির নেতৃত্ব তৈরি হবে না। ব্যুরোক্রেসিতে বলেন, রাজনীতিতে বলেন সব কিছু তো এখান (ছাত্রদের) থেকে আসবে। আমাদের ছেলে-পেলেরা যে রাজনীতি বিমুখ হয়ে গিয়েছিল, তার কারণ হচ্ছে যে, ছাত্র রাজনীতি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে চলে গিয়েছিল। এখন আবার তারা আসতে শুরু করেছে।’

তিনি বলেন, ‘এখন যদি আমরা ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করে দেই তাহলে কারা ভালো হবে? যারা অন্ধকারের মধ্যে কাজ করে তাদের জন্য ভালো হবে, যারা আন্ডার গ্রাউন্ডে গিয়ে কাজ করে তারা লাভবান হবে।’

ছাত্র রাজনীতি বন্ধ না করে হল দখল, সিট দখল ও গণরুম বন্ধ করার পরামর্শ দেন বিএনপি’র এই নেতা। তিনি বলেন, ‘রাজনীতি থাকতে হবে, রাজনীতিকে গ্রহণ করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করছে, এটাকে আমি পুরোপুরি মনে করি, এটা একটা খারাপ পদক্ষেপ। মাথা ব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলে দিতে হবে, এটা কোনো কথা না। কোথায় সমস্যা হচ্ছে সেটা সমাধান করার চেষ্টা করি। যে ছাত্র সংগঠনগুলো আছে, তাদের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা সমাধান।’

ছাত্র সংগঠনের রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি করা উচিত না- এই কথায় অবশ্য আপত্তি নেই বিএনপি নেতার। বলেন, ‘এটাকে বাদ দিতে কী ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে, এসব বিষয়ে ছাত্রদের সঙ্গে কথা বললেই সমাধান আসতে পারে। কিন্তু এটা কি জোর করে করা যাবে? তাহলে সামরিক সরকারের সঙ্গে এই সরকারের পার্থক্য কী? আমাকে রাজনীতির মধ্যে থেকে রাজনীতি দিয়ে কাজটা করতে হবে।’

অন্তর্বর্তী সরকারের ‘বিপ্লবী সরকার’ হওয়া উচিত ছিল বলেও মত প্রকাশ করেন বিএনপি নেতা। তিনি বলেন, ‘এই সংবিধানের অধীনেই তো এই সরকার শপথ নিয়েছে তাই না? তাহলে ওই জিনিসটা সামনে রাখতে হবে এটা অস্বীকার করা সম্ভব না। যাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তারা নিঃসন্দেহে উঁচু মাপের বিশেষজ্ঞ। আমি মনে করি যে, তারা ভালো করবেন। সঙ্গে মানুষের চাওয়াটাকে নিতে হবে।’

নির্বাচনের সময় নিয়ে বিএনপির অবস্থানের প্রশ্নে ফখরুল বলেন, ‘আমি ঠিক ওইভাবে সুনির্দিষ্ট কোনো সময় বলিনি, বলব না, বলা উচিতও না। তবে যত দেরি হবে ততোই দেশের ক্ষতি হবে, সমাজের ক্ষতি হবে, রাজনীতির ক্ষতি হবে।’

রাজনৈতিক শাসনের বিকল্প নাই মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, গণতন্ত্রই সেরা শাসন ব্যবস্থা। রাজনীতি বাদ দিয়ে তো রাষ্ট্র চালানো যাবে না। রাষ্ট্র নিজেই একটি রাজনৈতিক বিষয়।’

সরকার যদি লম্বা সময় ক্ষমতায় থাকে, তাহলে কী হবে- এই প্রশ্নে ফখরুল বলেন, ‘এটা কেউ চাইলে ভুল সিদ্ধান্ত নেবে এবং এটা কখনই কাজে দেবে না। এটা জাতির জন্য বিপজ্জনক হবে, বড় রকমের সমস্যা তৈরি হবে।

‘কী সমস্যা হবে এটা তো এখন বলা যাবে না। তবে বাংলাদেশের মানুষ এটা মানবে না।’

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যেসব মামলা হচ্ছে, সেগুলো তাকে মোকাবিলা করার পরামর্শও দিয়েছেন ফখরুল। তিনি বলেন, ‘কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়, তাকে আইনের সামনে আসতে হবে। ‘উনি যদি সত্যিকার অর্থে রাজনীতিবিদ হন উনি নিজে এসে এখানে ফেইস করুক, যেটা আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া করেছেন। তিনি বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন, তারপরে জেলে গেছেন, এটাই হচ্ছে একজন রাজনৈতিক নেতার আচরণ।’

মত বিনিময়ে পাহাড়ে সংঘাত নিয়েও কথা বলেন ফখরুল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তিনি পার্বত্য এলাকায় কারফিউ আরোপের পরামর্শ দেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version