Homeজাতীয়‘শহীদি মার্চ’ কর্মসূচিতে বৈষম্যবিরোধী দেশ গড়ার শপথ ; পাঁচ দফা দাবি

‘শহীদি মার্চ’ কর্মসূচিতে বৈষম্যবিরোধী দেশ গড়ার শপথ ; পাঁচ দফা দাবি

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের এক মাস পূর্তিতে বৃহস্পতিবার ঢাকার রাজপথে ‘শহীদি মার্চ’ কর্মসূচি পালন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বেলা তিনটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে ‘শহীদি মার্চ’ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বেলা দুইটা থেকেই সেখানে জড়ো হতে থাকেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র–ছাত্রীরা। তাঁদের প্রায় প্রত্যেকের মাথায় দেশের পতাকা বাঁধা ছিল। অনেকের হাতে ছিল জাতীয় পতাকা। বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষের পাশাপাশি কর্মসূচিতে বিভিন্ন মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও অংশ নিয়েছেন।

‘শহীদি মার্চ’ শিরোনামে এই পদযাত্রায় বারবার ওঠে মুক্তির স্লোগান, মুক্ত বাংলাদেশের স্লোগান। একই সঙ্গে উচ্চারিত হয় আবু সাঈদ, মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধসহ গণ–আন্দোলনে নিহত অনেকের নাম।
বিকেল চারটার দিকে রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে শুরু হওয়া ‘শহীদি মার্চ’ পদযাত্রা নীলক্ষেত, নিউমার্কেট, কলাবাগান, মিরপুর রোড হয়ে ধরে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে সংসদ ভবনের সামনে যায়। সেখান থেকে ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, রাজু ভাস্কর্য হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়।

পাঁচ দফা দাবি:

শহীদ মিনারের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের পক্ষ থেকে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে গণহত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা। দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রতিটি শহীদ পরিবারকে আর্থিক ও আইনি সহযোগিতা দেওয়া। প্রশাসনে দুর্নীতিবাজ ও ফ্যাসিস্টদের দোসরদের চিহ্নিত করে অবিলম্বে বিচারের আওতায় আনা। গণভবনকে ‘জুলাই স্মৃতি জাদুঘর’ ঘোষণা এবং দ্রুত রাষ্ট্র পুনর্গঠনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, গণ–অভ্যুত্থানে আমাদের ভাইয়েরা রক্ত দিয়েছে। সেই অভ্যুত্থানের চেতনা ধরে রাখতে আমরা আবার রক্ত দিতে প্রস্তুত আছি। তিনি আরো বলেন,ভুলেও কেউ ফ্যাসিস্টদের দোসর হওয়ার চেষ্টা করবেন না। যাঁরা ফ্যাসিস্টদের বিন্দুমাত্র ধারণ করেন, তাঁদের উদ্দেশে বলতে চাই, যদি দোসর হয়ে থাকার চেষ্টা করেন, তাহলে এ দেশের ছাত্র–জনতা একসঙ্গে তাঁদের প্রতিহত করবে। কোনো চাঁদাবাজ, ক্ষমতার অপদখলকারী, সিন্ডিকেটদের অবস্থান এ দেশে হবে না।
সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, আবু বাকের মজুমদার, আবদুল কাদের ও গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির আহ্বায়ক আখতার হোসেনসহ অনেকে অংশ নেন এই কর্মসূচিতে।

রাজধানী ঢাকার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন এলাকায় গতকাল ‘শহীদি মার্চ’ কর্মসূচি পালন করা হয়। এ কর্মসূচির মাধ্যমে গত জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত হওয়া ছাত্র–জনতার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। একই সঙ্গে আহতদের মধ্যে এখনো যাঁরা হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন, যাঁরা হাত-পা-চোখ হারিয়েছেন, তাঁদের প্রতি সমবেদনা ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়।

 

সন্তানের ছবি নিয়ে স্বজনদের আকুতি

গত জুলাই ও আগস্টের শুরুতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলার সময় পুলিশের গুলিতে নিহত ব্যক্তিদের স্বজনেরাও গতকালের ‘শহীদি মার্চ’ কর্মসূচিতে অংশ নেন। তারা তাদের প্রিয়জনদের ছবি নিয়ে যোগদেন কর্মসূচিতে। স্বজনরা দাবি করেন, আন্দোলনে নিহত প্রত্যেককে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে হবে। রাষ্ট্র ও ছাত্র-জনতার কাছে প্রত্যাশা, শহীদ পরিবারগুলোকে কেউ যাতে ভুলে না যায়। তারা তাদের প্রিয়জনদের হত্যার বিচার দাবি করেন । 

বিচার দাবি:

আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির এক মাস পূর্তিতে ‘শহীদি মার্চ’ কর্মসূচিতে খুনের বিচারের দাবিতে সোচ্চার ছিলেন ছাত্র-জনতা। আন্দোলনে নিহতদের বিচারের দাবিতে স্লোগানে স্লোগানে রাজপথ প্রকম্পিত করেন তাঁরা।
‘শহীদি মার্চ’ এ অংশ নেয়া সাধারণদের দাবি , অন্যায়-অবিচার, গুম, খুন, জুলুম ও বৈষম্য দূর করতে ছাত্র-জনতা রাজপথে নেমেছিলেন। অতীতের মতো জুলুম-অনাচার-বৈষম্য যাতে না হয়, সেটাই প্রত্যাশা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটি প্ল্যাটফর্ম। যাঁদের নেতৃত্বে গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। গত ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version