Friday, November 22, 2024
Homeপ্রধান খবরনোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরে বেড়েছে বন্যার পানি ; মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ৩১ ;...

নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরে বেড়েছে বন্যার পানি ; মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ৩১ ; পানিবন্দি ২৮ লাখ মানুষ

দেশের ১১টি জেলায় বন্যায় মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেড়েছে। আজ বুধবার বেলা একটা পর্যন্ত এখন পর্যন্ত ৩১ জন মারা যাওয়ার তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। বন্যায় গতকাল পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ২৭।

আজ সচিবালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরেন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী রেজা। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এখন পর্যন্ত ১১টি জেলার ৭৩টি উপজেলা বন্যায় প্লাবিত। জেলাগুলো হলো ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লক্ষ্মীপুর, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সিলেট।

এর মধ্যে কুমিল্লায় ১২, চট্টগ্রামে ৫, নোয়াখালীতে ৬, কক্সবাজারে ৩, ফেনীতে ২, খাগড়াছড়িতে ১, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১ ও লক্ষ্মীপুরে ১ জন মারা গেছেন। এ ছাড়া মৌলভীবাজারে দুজন নিখোঁজ আছেন।

সর্বশেষ প্রাপ্ত হালনাগাদ (আজ বেলা একটা পর্যন্ত) তথ্য অনুযায়ী, এখনো ১২ লাখ ২৭ হাজার ৫৫৪টি পরিবার পানিবন্দী হয়ে আছে, যা আগের দিন ছিল ১২ লাখ ৭ হাজার ৪২৯টি পরিবার। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৮ লাখ ২২ হাজার ৭৩৪, যা গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ছিল ৫৬ লাখ ১৯ হাজার ৩৭৫। এখন পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ৪ হাজার ৩টি। এগুলোতে ৫ লাখ ৪০ হাজার ৫১০ জনকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ৩৯ হাজার ৫৩১টি গবাদিপশুকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।

বন্যার দুর্যোগ কিছুটা কমেছে:

দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যার দুর্যোগ কিছুটা কমেছে। উজানের তীব্র ঢল এবং অতি ভারি বৃষ্টির কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। যা দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর ও কক্সবাজারে। এরই মধ্যে নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে নেমে এসেছে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। বুধবার সকাল ৯টায় বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের ১১৬টি স্টেশনের মধ্যে ৯ পয়েন্টে পানি বাড়ার প্রবণতা দেখা গেলেও ১০১ পয়েন্টে কমছিল; আর অপরিবর্তিত ছিল ৬টি পয়েন্টে। ওই সময় দেশের কোনো নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়নি।

এ ছাড়া ভারত ফারাক্কা বাঁধের সব গেট খুলে দিলেও পাবনায় পদ্মা ও যমুনা নদীর পানি এখনো স্থিতিশীল রয়েছে। ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পদ্মা ও বেড়া উপজেলার মথুরা পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিন দিন ধরে এই দুই পয়েন্টে পানি স্থিতিশীল রয়েছে উল্লেখ করে এ নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই বলে দাবি করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা।
দেশের সব প্রধান নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, পদ্মা এবং দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি কমেছে। উত্তরাঞ্চলের তিস্তা-ধরলা-দুধকুমার নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বিরাজমান আছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। বুধবার এক বিজ্ঞপ্তিতে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র এ তথ্য জানায়।

ফেনীতে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও দুর্ভোগে বানভাসিরা। নোয়াখালীতে পানিবন্দি ২১ লাখ মানুষ। লক্ষ্মীপুরে পানিবন্দি প্রায় সোয়া সাত লাখ মানুষ। বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি। কুমিল্লায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তনীয় এবং দুজনের মৃত্যু হয়েছে। বন্যায় চাঁদপুরে ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। মৌলভীবাজার কমতে শুরু করেছে নিন্মাঞ্চল থেকে বন্যার পানি।

ফেনী:
ফেনীতে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে কিন্তু দুর্ভোগ ছাড়ছে না বানভাসি মানুষের। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে বন্যাকবলিত এলাকা। নিন্মাঞ্চল ছাড়া কয়েকটি এলাকা থেকে বন্যার পানি নেমে গেছে। পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে ফুটে উঠছে সড়ক, কালভার্ট ও বাড়িঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনার ক্ষয়ক্ষতির চিত্র। বন্যাকবলিত অনেক এলাকায় খাদ্য, নিরাপদ পানির সংকট প্রকট। বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় বানভাসি মানুষের ভোগান্তি এখনো কমেনি।

বন্যায় প্লাবিত হওয়া পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলার কোথাও কোথাও পানি রয়েছে। সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক না হওয়ায় ট্রলি ও ট্রাকে করে গন্তব্যে পাড়ি দিচ্ছেন মানুষ। দাগনভূঞা ও সোনাগাজী উপজেলায় বন্যার পানি কমলেও কিছু স্থানে মানুষ এখনো পানিবন্দি রয়েছেন। এ ছাড়া সোনাগাজী ও ফেনী সদর উপজেলার কিছু এলাকায় কোথাও হাঁটু পানি আবার কোথাও কোমর পানি রয়েছে।

ফেনী জেলায় বন্যায় জেলায় সাড়ে ১০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক মোসাম্মত শাহিনা আক্তার। তার মধ্যে দেড় লাখ মানুষকে বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে আনা হয়েছে। দুর্গম এলাকায় হেলিকপ্টারে করে খাবার পাঠানো হচ্ছে। জেলা সদরে একটি এবং ৬ উপজেলায় ছয়টি মেডিক্যাল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বেসরকারি সাতটি হাসপাতালে মেডিক্যাল ক্যাম্প চালু রয়েছে।

এ ছাড়া ফেনী ডায়াবেটিক হাসপাতালের আউট ডোরে ৫ জন ডাক্তার ও জরুরি বিভাগে বিনামূল্যে বন্যাকবলিত মানুষকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া ছাড়াও বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেয়ার জন্য ১০ শয্যার একটি ডায়রিয়া ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে কিছু সিজার রোগীর চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছে বলে জানান ডায়াবেটিক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আসাদুল্লা হিল গালিব।

নোয়াখালী:
চাটখিলে বন্যার পানি ক্রমেই বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যাচ্ছে। পানিবন্দি রয়েছে কয়েক লাখ মানুষ। বাড়ি ছাড়া হয়ে আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে হাজার হাজার লোকজন। বন্যার্তদের সহযোগিতায় রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে উপজেলা প্রশাসন। তবে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো এগিয়ে আসায় উপজেলা প্রশাসন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেরতে পারছে।
দিন-রাত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে ও বাড়িতে বাড়িতে পানিবন্দি বন্যার্তদের মাঝে খাবার সামগ্রী, বোতলজাত পানি, জরুরি ওষুধ ও প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা প্রদান করে আসছে। উপজেলার প্রধান প্রধান সড়কগুলো ৩-৫ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
অধিকার কর্মী-স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সভাপতি রুবেল হোসেন জানান, তারা ত্রাণ বিতরণ করতে গিয়ে অনুভব করেছেন, দরিদ্র বিবেচনায় ত্রাণ বিতরণ করা যাবে না। বন্যাকবলিত পরিবার বিবেচনায় ত্রাণ বিতরণ করতে হবে। কারণ কারও খাবার কেনার আর্থিক সামর্থ্য থাকলেও বাজার থেকে খাবার কিনে বাড়িতে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সবকটি সড়ক পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় রিক্সা, ভ্যান ও সিএনজি চলাচল করছে না।
ফলে লোকজন খাবার কিনে নিতে পারছে না। তাই স্বেচ্ছাসেবী ও সামাজিক সংগঠনগুলোকে ত্রাণ বিতরণে পরস্পর সমন্বয় করে গণহারে সমানভাবে ত্রাণ বিতরণ করা জরুরি। এ সময় তিনি আরও উল্লেখ করেন, আস্ সুন্নাহ ফাউন্ডেশনসহ বড় বড় যে সংগঠনগুলো রয়েছে সেই সংগঠনগুলো পার্শ্ববর্তী সোনাইমুড়ী উপজেলায় ত্রাণ বিতরণ করলেও চাটখিলে এখনো ত্রাণ বিতরণ করেনি।
গণহারে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম সহজীকরণের জন্য সব ত্রাণসামগ্রী উপজেলা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হলে ত্রাণসামগ্রী উপজেলার সংক্রিয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকে এলাকাভিত্তিক দায়িত্ব দিয়ে ত্রাণ বিতরণ করলে বন্যাকবলিত প্রতিটি পরিবার খাবার সামগ্রী পাবে বলে তিনি মনে করেন।
বুধবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যলয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ১৩৭টি আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় ১৫ হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু রয়েছে। প্রতিদিনই আশ্রয় কেন্দ্রে লোকজনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব মানুষের তিনবেলা খাবার, চিকিৎসা উপজেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন যৌথভাবে বহন করে আসছে।

লক্ষ্মীপুর:
বুধবার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। তার মাঝে উজান থেকে আসা পানির চাপ তো অব্যাহত রয়েছে। মানুষের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। জেলা শহরের বাজার সড়কেও পানি উঠতে শুরু করেছে। জেলার এখন প্রায় বেশিরভাগ এলাকার বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। জেলার পাঁচটি উপজেলার ২৬৫টি গ্রামের প্রায় সোয়া লাখ পরিবারের ৭ লাখ ২৩ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে রয়েছে। চুলোয় পানি ওঠায় ঘরে থাকা হাজারো পরিবার রান্নাবান্না করতে পারছেন না। টিউবওয়েল ডুবে যাওয়ায় বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট রয়েছে।
অপরদিকে দুর্গত এলাকায় ত্রাণসামগ্রী দলীয় লোক বিবেচনায় দেওয়া হচ্ছে বলে বিভিন্ন এলাকা থেকে অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে সদর উপজেলার চরশাহী তিতারকান্দি এলাকা থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষ থেকে এমন অভিযোগ উঠেছে। তবে সরকারি ত্রাণসামগ্রীগুলো দলীয় বিবেচনা না করে সবাইকে দেওয়া হচ্ছে। তবে সরকারি পর্যায়ে যে ত্রাণসামগ্রী দেয়া হচ্ছে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। এদিকে জেলা প্রশাসকের তরফ থেকে আরও বেশি ত্রাণসামগ্রী পাঠাতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে।
জেলায় নগদ টাকা বিতরণ করা হয়েছে ২০ লাখ ৭০ হাজার টাকা এবং চাল বিতরণ করা হয়েছে ৭৮৯ টন। জেলার প্রায় সকল যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। নৌযানের অভাবে পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী বানবাসিদের মাঝে পৌঁছানো যাচ্ছে না। কৃষি ও মৎস্য সম্পদের প্রায় শতভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমনটিই জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

কুমিল্লা:
লাকসামে বন্যার পানি কিছুটা কমতে শুরু করলেও সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। সরকারি হিসাবে উপজেলার ১ লাখ ৫০ হাজার মানুষ এখানো পানিবন্দি। ৮৩টি আশ্রয় কেন্দ্রে ১৪ হাজার বন্যার্ত আশ্রয় নিয়েছে। তবে আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের বাসায় আশ্রয় নেওয়া মোট বন্যার্তের সংখ্যা ৬০ হাজার ছাড়িয়ে যাবে।
উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ত্রাণের সংকট রয়েছে। বিশেষ করে রান্না করা খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট চরমে। কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের লাকসাম অংশের আশপাশ এলাকায় আশ্রয় কেন্দ্রে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে পর্যাপ্ত ত্রাণকার্য চালু রয়েছে। তবে রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় প্রত্যন্ত অঞ্চলে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছাতে না পারায় দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছে বানভাসিরা। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে বন্যার্তদের পানি সরবরাহ করতে গিয়ে কাদ্রা গ্রামের খালেদ মাহমুদ শিহাব (২১) নামের এক মাদ্রাসা ছাত্র বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন। সোমবার সকালে আউশপাড়া আশ্রয় কেন্দ্রে মাকসুদা বেগম (৫৫) নামের এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে। তার বাড়ি উপজেলার কান্দিরপাড় ইউনিয়নের কামড্ডা গ্রামে।

চাঁদপুর :
কচুয়ায় বন্যার পানিতে ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বুধবার উপজেলার আশ্রাফপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে গত রবিবার থেকে পিপলকড়া, বড় ভবানীপুর, ছোট ভবানীপুর, রসুলপুর, সানন্দকড়া, চক্রা, ভিটা পাতা ও নেচ ছোয়া গ্রামে পানি বেড়ে অধিকাংশ বাড়ি ও বসতঘরে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। প্রতিদিন পানি বেড়ে চলছে, রাস্তাঘাট ডুবে বসতঘরে পানি ঢুকে পড়েছে।
মালামাল চুরি হয়ে যাবার আশঙ্কায় ২-১ জন ঘরে উঁচু মাচা তৈরি করে থাকলেও পরিবারের কিছু সদস্য আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছে। খাবার ও পানির সংকট রয়েছে। ইতোমধ্যে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষে পিপলকড়া আবদুল মজিদ স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও জগতপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে অস্থায়ী আশ্রয় ক্যাম্প খোলা হয়েছে।
বুধবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এহসান মুরাদ ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন এবং খাবার সামগ্রী বিতরণ করেন। আবদুল মজিদ স্কুল অ্যান্ড কলেজ আশ্রয় কেন্দ্র চালু হওয়ার পর থেকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করে আসছে।
ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল মাওলা হেলাল জানান, সরকারি সহায়তার পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পিপলকড়া হিলফুল ফজুল ইসলামী সংগঠন প্রতিদিন এক বেলা রান্না করা খাবার আবদুল মজিদ স্কুল অ্যান্ড কলেজ আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা ৬০ জনকে পরিবেশন করে আসছে।
বন্যায় মাঠের পাকা আউশ ধান, আমন ধানের বীজতলা, শাকসবজি ও সব মাছের খামার পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে দিন দিন ওই এলাকার জনগণের দুর্ভোগ বাড়ছে।

মৌলভীবাজার:
কয়েকদিন উজানে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় মৌলভীবাজার জেলার সব নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। মনু, ধলাই ও কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শুধু জুড়ী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যার পানি বিভিন্ন এলাকা থেকে নেমে যাওয়ার অনেকেই বাড়ি ফিরছেন। নিন্মাঞ্চল থেকেও পানি কমতে শুরু করেছে।
সরকারিভাবে ত্রাণ দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও ব্যক্তি উদ্যোগে ত্রাণসামগ্রী বন্যার্তদের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে। তবে অধিকাংশ ত্রাণ আশ্রয় কেন্দ্রে দেওয়া হচ্ছে। দুর্গম বা নিন্মাঞ্চলে ত্রাণসামগ্রী প্রয়োজনের তুলনায় কম পৌঁছাচ্ছে। বন্যাদুর্গত নিন্মাঞ্চাল এলাকায় খাদ্যসংকট ও বিশুদ্ধ পানির অভাব রয়েছে।

কুমিল্লা :
জেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত আছে। তবে ধীরগতিতে উজানের পানি কমতে থাকলেও এখনো শুকনো জায়গার দেখা মিলছে না। বন্যাকবলিত এলাকার রাস্তাঘাট, জমির ফসল, মাছের খামার ও ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে। বানভাসি মানুষের প্রতিটি মুহূর্ত কাটছে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায়। গতকাল বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কুমিল্লার গোমতী নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে অবস্থান করছিল।
বেশিরভাগ স্থানে পানি নামতে শুরু করলেও ঘরে ফেরার অবস্থা নেই প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের। ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে দুর্গত মানুষেরা তাদের সহায়-সম্বল হারিয়েছেন। অধিকাংশ এলাকায় পানিতে ডুবে থাকার পর ভেসে ওঠা রাস্তা, ঘরবাড়িগুলো যেন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। পানি কমতে শুরু করার পর কেউ কেউ আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ফিরতে শুরু করেছেন।
তবে তারা বিধ্বস্ত সড়ক মাড়িয়ে কিছুটা হেঁটে, কিছুটা হাঁটু পানি পেরিয়ে নিজের ঘরের কাছে গিয়ে দেখেন বাড়ির আসবাবপত্র থেকে শুরু করে বেশিরভাগ জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে গেছে, থাকার উপযোগী নেই কিছুই। #

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments