Homeঅন্যান্য খবরনতুন চার উপদেষ্টার পরিচিতি

নতুন চার উপদেষ্টার পরিচিতি

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে আরও চারজন শপথ নিলেন। আজ শুক্রবার বিকেল ৪টা ১০ মিনিটের দিকে তারা শপথ নেন। বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তাদের শপথবাক্য পাঠ করান।

আজ শপথ নেওয়া চার উপদেষ্টা হলেন অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, বিডিআরের (বর্তমান নাম বিজিবি) সাবেক মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ও সাবেক সচিব মুহাম্মদ ফাওজুল করিম খান।।

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ

অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ একসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি পড়াতেন। তিনি ১৯৯৬ সালে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ছিলেন। যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শৈশব পার করা এই অর্থনীতিবিদ বাংলাদেশে এনজিওগুলোর ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচিতে অর্থায়নকারী শীর্ষ সংস্থা পিকেএসএফের সহপ্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান।

আলী ইমাম মজুমদার

আলী ইমাম মজুমদার ১৯৫০ সালে কুমিল্লার নানুয়া দিঘিরপাড়ে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিভাগে ১৯৬৯ সালে স্নাতক ও ১৯৭৩ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করেন।

১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের প্রশাসন ক্যাডারের সদস্য হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন তিনি। চাকরিজীবনে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে সহকারী কমিশনার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটসহ উপজেলা ও জেলায় বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন।

তিনি মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ও পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ও সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ট্রাস্টি বোর্ডের ২০১৬ সাল থেকে সদস্য ও ২০২০ সাল থেকে মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আলী ইমাম মজুমদার। বর্তমানে তিনি জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) বিভিন্ন প্রকল্পের পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন।

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ১৯৫৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে ৩ তারকা হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় এবং বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বঙ্গ সেনা জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে সংঘর্ষের সময় তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) প্রধান ছিলেন।

জাহাঙ্গীর আলম বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার ছিলেন ও একই সময়ে তাকে কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল পদে উন্নীত করা হয়। তাকে রাষ্ট্রপতির বাসভবন বঙ্গভবনে গিয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিকে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে বলার কৃতিত্ব দেওয়া হয়। এ ঘটনার মাধ্যমে ২০০৮ সালে সামরিক বাহিনীকে ক্ষমতায় আসে।

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর জন্ম ২ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৩ সালে এবং ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আর্টিলারি কর্পসে কমিশন করেন। একজন গানার হিসেবে তার কর্মজীবনের শুরুতে তিনি কমান্ডিং টু আর্টিলারি ব্রিগেডস এবং ফিল্ড আর্টিলারি রেজিমেন্টসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন।

লেফট্যানেন্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বাংলাদেশ সামরিক একাডেমির প্রশিক্ষক ছিলেন। এরপর তিনি ইন্টার সার্ভিসেস সিলেকশন বোর্ডে একটি গ্রুপ টেস্টিং অফিসার (জিটিও) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৬ সালের মধ্যে বসনিয়া-হার্জেগোভিনা, রুয়ান্ডা এবং জর্জিয়াতে জাতিসংঘের সামরিক পর্যবেক্ষক ও স্টাফ হিসেবে তিনটি ভিন্ন জাতিসংঘ মিশনে কাজ করেছিলেন। তিনি ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড এবং স্টাফ কলেজে এবং ঢাকা ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের স্নাতক।

২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহে তার উত্তরাধিকারী মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ ও তার স্ত্রী নাজনীন হোসেন শাকিল শহীদ হন। এরপর কিউএমজি হিসেবে মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সেনাবাহিনীর তদন্ত কমিটির নেতৃত্ব দেন। এরপর ২০০৯ সালের ৩ ডিসেম্বর তাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

ফাওজুল কবির খান

২০০৭ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্ব পালনকারী ফাওজুল কবির খান সমসাময়িক আর্থসামাজিক বিষয়ে নিয়মিত নিবন্ধ লিখে থাকেন। যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রিধারী এই কর্মকর্তা সরকারি চাকরি থেকে লিয়েন নিয়ে ১৯৯২ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত সিঙ্গাপুর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে অধ্যাপনা করেন। ১৯৯৮ সালে তিনি ইডকল প্রতিষ্ঠা করেন ও ২০০৭ সাল পর্যন্ত সেখানে প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ সালে অবসর নেওয়ার পর থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তিনি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে অধ্যাপনা করেন। তার বাড়ি চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে।

গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হলেও বিভিন্ন ঘটনায় মন্ত্রণালয় ও দপ্তরগুলো কার্যত অচল ছিল। এ অবস্থায় এগুলো দ্রুত কার্যকরের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা। তারই অংশ হিসেবে সরকারের আকার বাড়ানো হচ্ছে। গত ৮ আগস্ট নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে শপথ নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এ সরকারে রয়েছেন ১৬ জন উপদেষ্টা। নতুন চারজন শপথ নিলে প্রধান উপদেষ্টাসহ মোট উপদেষ্টা হলেন ২১ জন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version