শোকাবহ ১৫ আগস্ট আজ। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৯তম শাহাদাতবার্ষিকী। এবার ভিন্ন প্রেক্ষাপটে এসেছে ১৫ আগস্টের দিনটি। টানা ১৫ বছর পর এবারই দিনটি রাষ্ট্রীয়ভাবে ও জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন হচ্ছে না।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এর পর গত মঙ্গলবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জাতীয় শোক দিবসের সরকারি ছুটি বাতিল করে। মঙ্গলবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাসভবনে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধু ছাড়াও সেই রাতে তাঁর সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, তিন ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শিশুপুত্র শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ভাই শেখ আবু নাসের, বঙ্গবন্ধুর ফোন পেয়ে তাঁর জীবন বাঁচাতে ছুটে আসা কর্নেল জামিলউদ্দিন আহমেদ, এসবির কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান ও সেনাসদস্য সৈয়দ মাহবুবুল হককে হত্যা করা হয়। ওই রাতেই বঙ্গবন্ধুর ভাগনে যুবলীগের নেতা শেখ ফজলুল হক মনির বাসায় হামলা চালিয়ে তাঁকে এবং তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনিকে হত্যা করা হয়। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত ও তাঁর কন্যা বেবি, পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতি সুকান্ত বাবু, সেরনিয়াবাতের বড় ভাইয়ের ছেলে সজীব সেরনিয়াবাত এবং এক আত্মীয় আবদুল নঈম খানকেও হত্যা করা হয়। ওই সময় বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে অবস্থান করায় বেঁচে যান।
পঁচাত্তরের বিয়োগান্ত হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সরকার বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পদক্ষেপ নেয়। নানা ঘটনাপ্রবাহ শেষে ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর পাঁচ হত্যাকারীর ফাঁসির রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে এই বিচার প্রক্রিয়া শেষ হয়। পরে বিদেশে পলাতক আরও এক হত্যাকারীকে দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসি কার্যকর করা হয়। তবে এখনও বিদেশে পলাতক রয়েছে আরও পাঁচ হত্যাকারী।
আনুষ্ঠানিক কোনো কর্মসূচি নেই : সরকার পতনের পর থেকে কার্যত জনবিচ্ছিন্ন আওয়ামী লীগের আজ আনুষ্ঠানিক কোনো কর্মসূচি নেই। যদিও দলের পক্ষ থেকে গত ৩১ জুলাই প্রতি বছরের মতো এবারও শোকের মাস পালনের অংশ হিসেবে ১৫ আগস্টের বিস্তারিত কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছিল। গত ৫ আগস্ট পদত্যাগের পর থেকে ভারতে অবস্থান করছেন দলের সভাপতি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া সাধারণ সম্পাদকসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারাসহ সর্বস্তরের নেতাকর্মী ও ক্ষমতাচ্যুত সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের প্রায় সবাই আত্মগোপনে, অনেকেই হামলার শিকার, সাবেক মন্ত্রী এমপিসহ বেশ কয়েকজন গ্রেপ্তারের ঘটনায় তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
শেখ হাসিনার বার্তা: মঙ্গলবার দলের সভাপতি শেখ হাসিনা তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে দেয়া এক বিবৃতিতে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালনের জন্য দেশের সর্বস্থরের মানুষের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
শোক দিবস উপলক্ষে গোপালগঞ্জে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। যথাযথ মর্যাদায় শাহাদাতবার্ষিকী পালন করবে তারা। বিশেষ করে দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালনের জন্য একাধিক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ। এই উপলক্ষে সকাল ৭টায় পুরো জেলায় জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ, সংগঠনের সর্বস্তরের কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ এবং কালো পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দলীয় কর্মসূচি শুরু হবে। সকাল ৭টা ২০ মিনিটে জেলা আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন সহ সেখানে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হবে। সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধের বেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। দুপুর ১২টায় টুঙ্গিপাড়ায় সমাধি সৌধ কমপ্লেক্স চত্বর জামে মসজিদে ১৫ আগস্টে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, দুপুর সাড়ে ১২টায় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। একই দিন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে।
জাতীয় শোক দিবসে এসব কর্মসূচি আয়োজনের কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিএম শাহাবুদ্দিন আজম। তিনি বলেন,দিবসটি সফল করতে জেলা আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের সব নেতাকর্মী এবং সর্বস্তরের মানুষ উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করছি আমরা।