নারায়ণগঞ্জের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ও বন্ধন পরিবহনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে শ্রমিক ইউনিয়নের দুই নেতাসহ উভয় পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছে। রোববার দুপুরের পর থেকে বিকাল পর্যন্ত শহরের ১নং, ২নং রেল গেইট, টানবাজার ও লঞ্চ টার্মিনাল এলাকায় দফায় দফায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় ঘটনাস্থলের চারপাশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বন্ধ হয়ে যান যানবাহন চলাচল। পরে যৌথবাহিনী অভিযান চালিয়ে ৮ জনকে আটক করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, রোববার সকাল থেকেই কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে সিটি বন্ধন পরিবহনের নিয়ন্ত্রণ নিতে মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য মাহবুব উল্লাহ তপন ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন রানার নেতৃত্বে নেতাকর্মীদের নিয়ে শো-ডাউন দেয়া হয়। তপন-রানার গ্রুপের শোডাউনের খবর পেয়ে দুপুরে সাবেক ছাত্রদল নেতা করাবন্দী জাকির খানের অনুসারী বিএনপি নেতা কর্মীরা অবস্থান নেয় বাস টার্মিনালে। এক পর্যায়ে দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হয়। উভয় পক্ষ লাঠিসোঠা ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকলে গোটা এলাকায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এরই মধ্যে তপন-রানা গ্রুপের একজনকে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করার ছবি বিভন্ন সামাজিক ও গণ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষের ঘটনায় শ্রমিক ইউনিয়নের দুই নেতাসহ উভয় পক্ষের অন্তত ১৫ আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়।
সংঘর্ষে আহত নারায়ণগঞ্জ জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও মহানগর শ্রমিকদলের সদস্য সচিব ফারুক হোসেন জানান, প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া সিটি বন্ধন পরিবহনের স্থলে বন্ধন পরিবহন নিয়ন্ত্রণে নেয়। এটা বন্ধন পরিবহনের দুই পক্ষের বিষয়, কিন্তু হঠাৎ শ্রমিকদের অফিসে হামলা ভাংচুর চালায় দুই পক্ষের লোকজন। এতে সড়ক পরিবহন নেতা দেলোয়ার হোসেন ও সিরাজুল ইসলাম রক্তাক্ত হয়েছেন।
তিনি আরও জানান, সিটি বন্ধন পরিবহনের নতুন চেয়ারম্যান হয়েছেন লিটন ও এমডি দেলোয়ার হোসেন। অন্যদিকে বিলুপ্ত বন্ধন পরিবহনের চেয়ারম্যান হিসেবে মাহবুব উল্লাহ তপন রয়েছেন।
পরিবহন মালিক ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা জানান, আওয়ামীলীগ সরকার আমলে বন্ধন পরিবহন নাম বিলুপ্ত করে সিটি বন্ধন পরিবহনের নামে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে বাস চলাচল শুরু করে। এর আগে ক্রসফায়ারে নিহত যুবদল নেতা মমিনউল্লাহ ডেভিডের ভাই ও মহানগর বিএনপির সদস্য মাহবুব উল্লাহ তাপন বন্ধন পরিবহনের চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরে মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাবেক সভাপতি জুয়েল হোসেন বন্ধন পরিবহন বিলুপ্ত করে সিটি বন্ধন পরিবহনের চেয়ারম্যান হন। পরবর্তীতে পরিবহনের এমডি ও কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আইয়ূব আলীর নিয়ন্ত্রণে বাস চলাচল করে। ৫ আগষ্ট আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর থেকেই বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে টানাপোড়ন চলছে বিএনেির দুই গ্রুপের মধ্যে।
নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি নজরুল ইসলাম জানান, নিজেদের অবস্থান ধরে রাখাতে দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ এবং সেনাসদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে কাজ করে। যৌথবাহিনীর সহায়তায় ঘটনাস্থল থেকে ৮ জনকে আটক করা হয়েছে। বতর্মানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।