পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে অবরোধ ও পরিবহন ধর্মঘটের প্রভাবে শনিবার জনজীবন ছিল অনেকটাই স্থবির। তবে নতুন করে কোনো সংঘাতের খবর পাওয়া যায়নি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গত শুক্রবার দুপুরে রাঙামাটিতে জারি করা ১৪৪ ধারা গতকালও বলবৎ ছিল। তবে খাগড়াছড়ি জেলা সদরে শুক্রবার রাত ৯টার পর ১৪৪ ধারা জারির মেয়াদ বাড়ানো হয়নি।
বৃহস্পতিবার খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় পাহাড়ি ও বাঙালির মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পরে রাতে জেলা সদরে গোলাগুলিতে ৩ জন নিহত ও ২০ জন আহত হন। এ ঘটনার প্রতিবাদে পরদিন শুক্রবার রাঙামাটিতে আয়োজিত প্রতিবাদ মিছিলে ঢিল ছোড়াকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে ১ জন নিহত ও ৬০ জন আহত হন।
সহিংসতা–সংঘাতের প্রতিবাদে ও দোষী ব্যক্তিদের শাস্তির দাবিতে শনিবার সকাল থেকে তিন পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবানে ‘সিএইচটি ব্লকেড’ নামে সড়ক ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। শুক্রবার চট্টগ্রাম নগরের চেরাগী পাহাড় মোড় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ কর্মসূচি থেকে ‘বিক্ষুব্ধ জুম্ম ছাত্র–জনতার’ ব্যানারে ৭২ ঘণ্টার এ অবরোধের ডাক দেওয়া হয়। কর্মসূচিতে সমর্থন দিয়েছে সংঘাত ও বৈষম্যবিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলন নামের সংগঠন। এ ছাড়া পার্বত্য এলাকার আঞ্চলিক দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টও (ইউপিডিএফ) অবরোধে সমর্থন দেয়।
এদিকে বাস, ট্রাক ও সিএনজি মালিক এবং শ্রমিক সমিতির ডাকে রাঙামাটিতে শনিবার সকাল ছয়টা থেকে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়েছে। শুক্রবার রাঙামাটিতে বাস, ট্রাক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা পুড়িয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে এ ধর্মঘট ডাকা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রুহুল আমিন।
অবরোধ ও পরিবহন ধর্মঘটের কারণে রাঙামাটিতে কার্যত দূরপাল্লা ও স্বল্প দূরত্বের কোনো গাড়ি চলেনি। শহরের ভেতরেও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধ ছিল। দোকানপাট খোলেনি। কাপ্তাই হ্রদে নৌ চলাচলও ছিল সীমিত। এতে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পড়ে।
শনিবার সকাল থেকে খাগড়াছড়ির সঙ্গে চট্টগ্রাম ও ঢাকার যান চলাচল বন্ধ ছিল। জেলায় বিভিন্ন উপজেলার মধ্যে চলাচলকারী জিপ বা সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলেনি। অবশ্য শহর এলাকায় কিছুসংখ্যক অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচল করতে দেখা গেছে। খাগড়াছড়ি বাজারের দোকানপাট খোলা থাকলেও পানছড়ি উপজেলার বাজার ও দীঘিনালা উপজেলা শহরে দোকানপাট খুলতে দেখা যায়নি।
বান্দরবানে অবরোধের তেমন প্রভাব পড়েনি। সকাল থেকে সেখানে যান চলাচল করেছে। শুধু বান্দরবান–রাঙামাটি সড়কে যান চলাচল সীমিত ছিল।
এদিকে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে সংঘর্ষ ও উত্তেজনাকর পরিস্থিতির পূর্বাপর তুলে ধরে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) শুক্রবার দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইউপিডিএফ প্রসঙ্গে যে কথা বলা হয়েছে, তাকে বানোয়াট ও প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার অপপ্রয়াস বলে দাবি করেছে আঞ্চলিক দলটি। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইউপিডিএফের মুখপাত্র অংগ্য মারমা বলেন, দীঘিনালার বোয়ালখালীতে বাঙালিদের কথিত মিছিল চলাকালে ঘটনাস্থলে ইউপিডিএফের নেতা-কর্মীর উপস্থিতি ছিল না। খাগড়াছড়ির স্বনির্ভর এলাকায় টহলরত সেনা দলের ওপর ইউপিডিএফ কর্মীদের গুলি ছোড়ার কথাও সত্যের অপলাপ।