সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, কয়েক দিন ধরে তিস্তা নদীর পানি বাড়ছে। শনিবারের মধ্যে পানি আরও দ্রুত বাড়তে পারে। এতে নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও রংপুরের নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, উজানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও সিকিমে হঠাৎ ভারী বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলেও ভারী বৃষ্টি চলছে। এতে উত্তরাঞ্চলের প্রধান নদী তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার ও আত্রাইয়ের পানি দ্রুত বাড়তে শুরু করেছে। তবে এখনো এসব নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। তিস্তা নদীর পানি আজ বিপৎসীমার কাছাকাছি বা অতিক্রমও করে যেতে পারে।
এ ব্যাপারে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান বলেন, আজ শনিবার থেকে তিস্তা অববাহিকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। আগামী চার–পাঁচ দিন পর গঙ্গা অববাহিকায় পানি বাড়তে পারে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ডালিয়া অঞ্চলের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, লালমনিরহাটের দোয়ানীতে অবস্থিত তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে বুধবার তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ১০৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। বৃহস্পতিবার কিছুটা বেড়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল বিপৎসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে। গতকাল শুক্রবার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৩২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
পাউবো ডালিয়া অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্বে রয়েছেন নীলফামারী অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আতিকুর রহমান বলেন, তিস্তা নদীর পানি কয়েক দিনের তুলনায় কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বোচ্চ ২২৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। রংপুর বিভাগের বেশির ভাগ জেলায় গতকাল ১০০ থেকে ১৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। দেশের মধ্যাঞ্চলের এলাকা রাজধানীসহ ঢাকা বিভাগেও ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হয়েছে। রাজধানীতে গতকাল বেলা তিনটা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ৭০ মিলিমিটার। বৃষ্টির পাশাপাশি দেশের বেশির ভাগ এলাকার বাতাসের আর্দ্রতা অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। ফলে একদিকে বৃষ্টি ঝরছে, অন্যদিকে ভ্যাপসা গরমের অনুভূতি থাকছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেছা বলেন, বর্ষার এখন শেষ সময়। এ সময়ে সাধারণত বৃষ্টি বেড়ে যায়। আজ দেশের উত্তরাঞ্চলসহ কয়েকটি এলাকায় বৃষ্টি থাকতে পারে। এরপর দুই দিন বৃষ্টি কমে আসতে পারে। আগামী মাসের শুরু থেকে আবারও বৃষ্টি চলতে পারে। ওই বৃষ্টি তিন–চার দিন থাকতে পারে।
পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, আজ দেশের উত্তরাঞ্চল ছাড়াও চট্টগ্রাম বিভাগে বৃষ্টি বাড়তে পারে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোখাও ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এর ফলে ওই বিভাগের জেলাগুলোতে পাহাড়ধসের আশঙ্কা আছে।
ভারী বৃষ্টিতে গত দেড় মাসে ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরে তিন দফা বন্যা হয়েছে। এসব জেলার নদ–নদী থেকে পানি নেমেছে; কিন্তু কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ ও লক্ষ্মীপুরের নদীতীরবর্তী এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে আছে। প্রায় এক মাস ধরে ওই এলাকায় জলাবদ্ধতার কারণে কয়েক লাখ মানুষ কষ্ট ও বিপদে আছেন।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আগামী দুই তিন দিনের মধ্যে দেশের উপকূলীয় এলাকাসহ পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলে আবারও ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এর ফলে এসব এলাকায় জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। বিশেষ করে ফেনী, কুমিল্লা ও লক্ষ্মীপুর এলাকায় জলাবদ্ধতা আরও তীব্র হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আজ ও আগামীকাল সারা দেশে গরমের তীব্রতা বাড়তে পারে। দেশের বেশির ভাগ এলাকার তাপমাত্রা ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বাড়তে পারে। আদ্র৴তা প্রায় ৯০ শতাংশ থাকায় গরমের কষ্টও হতে পারে বেশি।
পদ্মা ও মহানন্দা নদীর পানি বেড়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় দুই হাজার হেক্টর জমির ফসল। পানিবন্দী হয়েছে প্রায় ৮৫০ পরিবার।
শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবতাবুজ্জামান-আল-ইমরান বলেন, পদ্মা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় পাকা ও দুর্লভপুর ইউনিয়নের প্রায় ৮০০ পরিবার ও মনাকষা ইউনিয়নের কিছু পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানিবন্দী এসব মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
পাউবো চাঁপাইনবাবগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম আহসান হাবীব বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা নদীতে ১০ সেন্টিমিটার পানি কমেছে। বিপৎসীমার ৯০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে বইছে পদ্মার পানি। অন্যদিকে মহানন্দার পানি বেড়েছে মাত্র এক সেন্টিমিটার। মহানন্দার পানিও রয়েছে বিপৎসীমার নিচে। চাঁপাইনবাবগঞ্জে বন্যার আশঙ্কা কম বলে ধারণা করা হচ্ছে। সূত্র: প্রথম আলো।