ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহকে লক্ষ্য করে লেবাননে স্মরণকালের ভয়াবহ বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এবার দেশটিতে সম্ভাব্য স্থল অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। সম্ভাব্য স্থল অভিযানের অংশ হিসেবে উত্তর ইসরায়েলে সামরিক বাহিনীর চলমান মহড়া পরিদর্শন করেছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট। ফিলিস্তিনের গাজায়ও স্থল অভিযানের আগে নির্বিচার বিমান হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।
ইসরায়েলের একটি সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম বলেছে, লেবাননে সম্ভাব্য স্থল অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। স্থল অভিযানের জন্য মহড়ায় অংশ নেওয়া সেনাদের সঙ্গে দেখা করেছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে প্রতিরক্ষামন্ত্রী গ্যালান্ট বলেছেন, সম্প্রতি গাজা উপত্যকা থেকে লেবানন সীমান্ত স্থানান্তর করা ‘সাঁজোয়া বহরের যোদ্ধা ও প্যারাট্রুপারদের’ সঙ্গে দেখা করেছেন তিনি। প্রতিরক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, ‘ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দাদের নিজেদের বাড়িঘরে ফেরানোর লক্ষ্য অর্জনে আমরা যেকোনো ধরনের পদক্ষেপ নিতে ইচ্ছুক।’ টাইমস অব ইসরায়েলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লেবাননে স্থল অভিযান চালাতে মহড়া চালাচ্ছেন সেনারা।
লেবাননজুড়ে দফায় দফায় হামলা :
এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল বুধবারও লেবাননের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছিল ইসরায়েল। দক্ষিণ লেবানন ও পূর্বাঞ্চলীয় বেকা উপত্যকাসহ দেশটির বিভিন্ন এলাকায় দফায় দফায় বিমান হামলা চালানো হয়। হামলা থেকে বাদ যায়নি রাজধানী বৈরুতও।
এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলেছে, দক্ষিণ লেবানন ও বেকা এলাকায় বিস্তৃত আকারে বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। হিজবুল্লাহর বিভিন্ন স্থাপনা ও অস্ত্রের মজুত লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়।
গতকাল ইসরায়েলের হামলায় কমপক্ষে ১০ জন নিহত হন। গত সোমবার থেকে শুরু হওয়া এই হামলায় ৫৬৯ জন নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৫০ শিশুও রয়েছে। আহত হয়েছেন প্রায় দুই হাজার। হামলা অব্যাহত থাকায় হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তেল আবিবে হিজবুল্লাহর ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ:
এদিকে ইসরায়েলি হামলার জবাবে দেশটিতে রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া অব্যাহত রেখেছে হিজবুল্লাহ। প্রথমবারের মতো ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ শহর তেল আবিবের কাছে পৌঁছে গেছে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠীটির ক্ষেপণাস্ত্র। ক্ষেপণাস্ত্রটি ভূপাতিত করে ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা।
বার্তা আদান-প্রদানের অ্যাপ টেলিগ্রামে দেওয়া এক বিবৃতিতে হিজবুল্লাহ বলেছে, পেজার ও ওয়াকিটকি বিস্ফোরণ এবং লেবাননে সাম্প্রতিক হামলার সঙ্গে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ জড়িত। এ জন্য তেল আবিবে মোসাদের সদর দপ্তর লক্ষ্য করে একটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। তেল আবিবে সতর্কতামূলক সাইরেনের শব্দ শোনা গেছে। ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে তেল আবিবের কাছে একটি ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনার পর লেবাননে বিমান হামলা জোরদার করে ইসরায়েল।
মিসর, জর্ডান ও ইরাকের নিন্দা ও সতর্কবার্তা :
লেবাননে ইসরায়েলি আগ্রাসনের নিন্দা জানিয়েছে মিসর, জর্ডান ও ইরাক। এক যৌথ বিবৃতিতে দেশগুলো সতর্ক করে বলেছে, মধ্যপ্রাচ্যকে সর্বাত্মক যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে ইসরায়েল।
এর আগে স্থানীয় সময় গত মঙ্গলবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে এক বৈঠকে মিলিত হন এই তিন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। এ সময় তাঁরা এই যুদ্ধ বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে তাঁদের দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান।
নেতানিয়াহুকে হিটলারের সঙ্গে তুলনা তুরষ্কের:
এদিকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে নাৎসি একনায়ক অ্যাডলফ হিটলারের সঙ্গে তুলনা করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। তিনি বলেন, ৭০ বছর আগে হিটলারকে যেভাবে মানবিক মিত্রশক্তির মাধ্যমে দমন করা হয়েছিল, একইভাবে নেতানিয়াহু ও তাঁর খুনে নেটওয়ার্ককে মানবিক মিত্রশক্তির মাধ্যমে দমাতে হবে।
উল্লখ্য, গত বছরের ৮ অক্টোবর থেকে ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে প্রায় প্রতিদিনই হামলা-পাল্টা হামলা হচ্ছে। এ সময়ে ইসরায়েল লেবানন সীমান্তবর্তী উত্তরাঞ্চল থেকে ৬০ হাজারের বেশি নাগরিককে সরিয়ে নিয়েছে। এ নিয়ে ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহ বলছে, তারা ইসরায়েলের আগ্রাসন প্রতিহত করছে এবং ফিলিস্তিনিদের সাথে সংহতি প্রকাশ করছে। অপরদিকে ইসরায়েল বলছে, তাদের লক্ষ্য হিজবুল্লাহর হুমকি দূর করা।
উল্লখ্য, গত বছরের ৮ অক্টোবর থেকে ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে প্রায় প্রতিদিনই হামলা-পাল্টা হামলা হচ্ছে। এ সময়ে ইসরায়েল লেবানন সীমান্তবর্তী উত্তরাঞ্চল থেকে ৬০ হাজারের বেশি নাগরিককে সরিয়ে নিয়েছে। এ নিয়ে ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহ বলছে, তারা ইসরায়েলের আগ্রাসন প্রতিহত করছে এবং ফিলিস্তিনিদের সাথে সংহতি প্রকাশ করছে। অপরদিকে ইসরায়েল বলছে, তাদের লক্ষ্য হিজবুল্লাহর হুমকি দূর করা। [ অনলাইন ডেস্ক রিপোর্ট ; সূত্র,আলজাজিরা,এএফপি,সিএনএন]