Thursday, November 21, 2024
Homeঅর্থনীতিবাংলাদেশকে শতভাগ শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দেবে চীন

বাংলাদেশকে শতভাগ শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দেবে চীন

বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য আগামী ডিসেম্বর থেকেই চীন শতভাগ শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দেবে বলে দেশটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। সোমবার ঢাকার চীনা দূতাবাস এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়। এতে বলা হয়, গত ৫ সেপ্টেম্বর চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বেইজিংয়ে চীন-আফ্রিকা সহযোগিতামূলক সম্মেলনে চীনের বাজার স্বেচ্ছায় উন্মুক্ত করার ঘোষণা দেন।

‘তবে যেসব দেশের সঙ্গে চীনের কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে এবং যারা স্বল্পোন্নত দেশের কাতারে আছে, সেগুলোসহ আফ্রিকার ৩৩টি দেশ পণ্য রপ্তানিতে শতভাগ শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে। চীনই প্রথম দেশ, যারা এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে,’ বলা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।

আগামী পহেলা ডিসেম্বর থেকে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানিতে শতভাগ শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে বলে এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এর আগে ২০২২ সালে চীন ৯৮ শতাংশ বাংলাদেশি পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়। তখন চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যসহ ৩৮৩টি নতুন পণ্য ছিলো। তারও আগে ২০২০ সালে ৯৭ শতাংশ বাংলাদেশি পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয় চীন।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি হয় চীন থেকে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশে চীনের রপ্তানির পরিমাণ ছিলো ১৮ দশমিক ছয় বিলিয়ন ডলারের পণ্য। বাংলাদেশ থেকে চীনে রপ্তানি হয়েছিলো ৬৭৬ মিলিয়ন ডলারের পণ্য।

 

দূতাবাস জানিয়েছে, ৫ সেপ্টেম্বর চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন‌পিং চীন-আফ্রিকা শীর্ষ সম্মেলনে স্বল্পোন্নত (এলডিসি) দেশগুলোকে শতভাগ শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দেয়ার ঘোষণা দেন। আগামী ১ ডিডেম্বর থেকে চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে এমন স্বল্পোন্নত দেশগুলো (এলডিসি) পণ্য প্রবেশে শতভাগ শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা পাবে।

১২ সেপ্টেম্বর চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিন। পরে তিনি সাংবাদিকদের জানান, চীনের রাষ্ট্রদূত আমাদের যেটি জানিয়েছেন, কয়েকদিন আগে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে সিনো-আফ্রিকান যে শীর্ষ সম্মেলন হয়েছে সেখানে একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে (এলডিসি) শতভাগ শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দেবে চীন।

তিনি তখন আরো জানান, ২০২২ সালে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই যখন বাংলাদেশে এসেছিলেন, তখন ৯৮ শতাংশ শুল্কমুক্ত সুবিধা ছিল। সেটিকে এখন বাড়িয়ে শতভাগ করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের বড় বাণিজ্যিক অংশীদার বিশ্বের দ্বিতীয় অর্থনৈতিক পরাশক্তি ও শীর্ষ রফতানিকারক দেশ চীন। দেশটি ২০১৫ সালে কয়েকটি স্বল্পোন্নত দেশে তাদের পণ্যের ৯৭ শতাংশ পর্যন্ত বাণিজ্য সুবিধা বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়। পরবর্তী সময়ে ২০২০ সালের জুলাই থেকে ট্যারিফ লাইনের আওতায় ৯৭ শতাংশ বাংলাদেশী পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা কার্যকর করে। সবশেষ ২০২২ সালে আরো ১ শতাংশ বাড়িয়ে ৯৮ শতাংশ করা হয়। ট্যারিফ লাইনে আট হাজারেরও বেশি বাংলাদেশী পণ্য দেশটিতে শুল্ক সুবিধা পাচ্ছে। যার মধ্যে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যসহ ৩৮৩টি নতুন পণ্য ছিল।

তবে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুসারে, দুই দেশের মধ্যে বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশটিতে বাংলাদেশী পণ্য রফতানি হয়েছে মাত্র ৬৭৭ দশমিক ৩৫ মিলিয়ন ডলারের।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, চীন বাংলাদেশের বৃহত্তম আমদানি বাজারে পরিণত হয়েছে। প্রতি বছর সেখান থেকে আমদানি হচ্ছে ২৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি।

চীন থেকে আমদানির উল্লেখযোগ্য অংশ শুল্কমুক্ত বন্ডেড ওয়্যারহাউজের মাধ্যমে আসে। কারণ সেগুলো রফতানি শিল্পে ব্যবহার করা হয়।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, চীনে রফতানি না বাড়ার অন্যতম প্রধান কারণ পণ্য বহুমুখীকরণের অভাব। এছাড়া রয়েছে মার্কেটিং বা বিপণন ব্যবস্থার দুর্বলতা। ইউরোপে যুদ্ধ ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধের বিষয় বিবেচনায় চীন অভ্যন্তরীণ বাজারে মনোনিবেশ করেছে। তৈরি পোশাক উৎপাদনে তারা নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন করেছে। বাংলাদেশের শীর্ষ রফতানি পণ্য তৈরি পোশাক দিয়ে চীনা বাজার ধরা কঠিন। তাই দেশটিতে রফতানি বাড়াতে প্রয়োজন রফতানি পণ্যের বহুমুখীকরণ।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments