অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অনুষ্ঠিতব্য বিচার সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে।আমরা এ চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে সম্পূর্ণ সচেতন আছি।
আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ সংশোধনীর খসড়া উপস্থাপন নিয়ে এক সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
সভায় বিশিষ্ট আইনজীবী, মানবাধিকার কর্মী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নেয়া সংগঠকসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার প্রতিনিধিরা এ মতবিনিময় সভায় অংশ গ্রহন করেন।
সভায় সভাপতির বক্তৃতায় আইন উপদেষ্টা আরো বলেন, ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিম ও তদন্ত সংস্থা গঠিত হয়েছে। এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলো ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা। আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ সময়োপযোগী করতে কাজ চলছে।
বিদ্যমান আইনটিতে আটটি সংশোধনী প্রস্তাব উপস্থাপন করার পর তিনি বলেন, এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের কাছে আমরা এটি পাঠাবো , মতামত নিতে। আজ মতবিনিময় সভায় গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব ও পরামর্শ উঠে এসেছে। আইনগত সংস্কার এখানে থেমে থাকবে না, এটি চলমান থাকবে।
আইন উপদেষ্টা বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার গ্রহণযোগ্য করার সব ধরনের সক্ষমতা আমাদের রয়েছে। বিচার সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা পরিহার করা হবে।
তিনি বলেন,‘ কোন ধরনের প্রতিশোধ, প্রতিহিংসার মানসিকতা নয় সুবিচার নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন নির্মূলে আমরা দেখেছি একটা বৃদ্ধপ্রজন্ম উন্মত্তভাবে তরুণ প্রজন্মকে হত্যার নেশায় মেতেছিল। কি ভয়ংকর হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। আমাদের চোখের সামনে আমরা সব দেখেছি।’
ড. আসিফ নজরুল বলেন, আমরা চেষ্টা করব বিশ্বের কাছে, প্রতিটা মানুষের কাছে বিচারকে গ্রহণযোগ্য করতে। যারা বিচারের সম্মুখীন হবেন তাদের সমর্থকরাও যেন মনে করেন যে উনি এই অন্যায় করেছেন। সবাই যেন একমত হন যে বিচারে যদি কারো শাস্তি হয় অবশ্যই তা তার প্রাপ্য ছিল। সুবিচার ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সংশ্লিষ্ট সকলের সহায়তা কামনা করে আইন উপদেষ্টা বলেন, তাদের কার্যক্রমে সংশ্লিষ্টরা যেন ওয়াচ ডগ হিসাবে ভূমিকা রাখেন।
সভায় আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ সময়োপযোগী করার লক্ষ্যে প্রস্তাবিত খসড়া সংশোধনী উপস্থাপন করা হয়। প্রস্তাবিত খসড়া সংশোধনীতে ৪এ, ১৩এ ও ২০এ নামে ৩টি নতুন ধারা এবং ৩(৩) ও ১২(২) নামে ২টি নতুন উপধারা যুক্ত করা হয়। এছাড়া ধারা ৩(২)(এ), ৪(২) ও ১৯ ধারায় সংশোধন আনার প্রস্তাব করা হয়।
প্রস্তাবিত সংশোধনী নিয়ে সভায় বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যাক্তিবর্গ মতামত ব্যক্ত করেন। আলোচনা ও মতবিনিময়ে অংশ নেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন, সমবায় এবং ভূমি মন্ত্রণালয় বিষয়ক উপদেষ্টা এ. এফ. হাসান আরিফ, শিল্প, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় বিষয়ক উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, এটর্নি জেনারেল মোঃ আসাদুজ্জামান, আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মোঃ গোলাম রব্বানী, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সচিব (চলতি দায়িত্ব) ড. হাফিজ আহমেদ চৌধুরী, নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. বদিউল আলম মজুমদার, সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্না, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ ইকতেদার আহমেদ, সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম, আইন ও বিচার বিভাগের যুগ্ম-সচিব (মতামত) এস. এম. সাইফুল ইসলাম, যুগ্ম-সচিব (বাজেট ও উন্নয়ন) রুহুল আমীন, অধ্যাপক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান ও অধ্যাপক নাজমুজ্জামান ভূঁইয়া, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. বেগম আসমা সিদ্দীকা, রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের যুগ্ম-সচিব (ড্রাফটিং) মোঃ রফিকুল হাসান, আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, সোস্যাল মিডিয়া অ্যাক্টিভিস্ট ডা. জাহেদুর রহমান, সানজিদা ইসলাম, শরিফ ভূঁইয়াসহ প্রমুখ ।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অনুষ্ঠিতব্য বিচার সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে-আইন উপদেষ্টা
RELATED ARTICLES