আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির চেষ্টা করা হলে ‘হাত ভেঙে’ দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। পার্বত্য দুই জেলায় সংঘাত, সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনার পর শনিবার রাঙামাটিতে গিয়ে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভা শেষে একথা বলেন তিনি। অপরদিকে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে বাহির থেকে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমাদের কোথাও যেনো ছন্দপতন ঘটছে। এর পেছনের ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করা হবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.), স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় উপদেষ্টা এ. এফ. হাসান আরিফ, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত উপদেষ্টা সাবেক রাষ্ট্রদূত (অব.) সুপ্রদীপ চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রামে পরিদর্শনে যান। শনিবার সকাল ১০টায় তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারে তারা সেখানে বেলা ১১টায় পৌঁছান।
পরিদর্শন শেষে উদ্ভূত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও স্থানীয়দের সঙ্গে মতবিনিময় হয়। রাঙামাটি জেলার উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শনিবার দুপুর ১২টায় রাঙামাটি রিজিয়নের প্রান্তিক হলে জেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নেতৃত্বে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের এই প্রতিনিধি দলের সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা, পুলিশ প্রধান মইনুল ইসলাম, সেনাবাহিনীর চট্টগ্রামের জিওসি মেজর জেনারেল মোহাম্মদ মাইনুর রহমান, বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলাম। স্থানীয়দের মধ্যে বিএনপি, জনসংহতি সমিতি, জাতীয় পার্টি, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, পার্বত্য নাগরিক পরিষদ, পরিবহন মালিক শ্রমিক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা নিজ নিজ বক্তব্য ও পরামর্শ তুলে ধরেন।
উপদেষ্টা হাসান আরিফ বলেন, রাঙামাটিতে আসার সময় দেয়ালে দেয়ালে যে গ্রাফিতি দেখেছি, সেই গ্রাফিতির যে বার্তা সেটা শুধু রাঙামাটিতে নয়, সারা বাংলাদেশ শুধু নয়, পার্বত্য চট্টগ্রামেও সেই বার্তা দেখতে চাই। সেখানে সমপ্রীতি থাকবে। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমরা একসঙ্গে কাজ করব। আমরা সকলে সম্প্রীতি চাই। কিন্তু কোথাও একটা ছন্দপতন হচ্ছে। ছন্দপতনের ব্যাপারে প্রত্যেকের মুখে একটা শব্দ উচ্চারিত হয়েছে- ষড়যন্ত্র। বাইরে থেকে একটা ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে, আমাদের সম্প্রীতি নষ্ট করার জন্য। হাসান আরিফ বলেন, সভায় দাবি এসেছে একটি কমিশন বা কমিটির মাধ্যমে তদন্ত কমিটি করে সেখানে সুষ্ঠু ব্যবস্থা করার। যারা প্রকৃত দোষী তাদের যেন আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়। এখানে কোনো ভেদাভেদ না, কোনো সম্পীতির অভাব না, প্রত্যেকেই আমরা সম্প্রীতি চাই।
অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, কোনোভাবেই আইনশৃঙ্খলার অবনতি হতে দেওয়া যাবে না। যারা পরিস্থিতি অবনতি করার চেষ্টা করবে তাদের কোনো অবস্থাতেই ছাড় দেওয়া হবে না। তাদের হাত ভেঙে দেওয়া হবে। রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে সংঘাত, সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনায় একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে এবং এর সুষ্ঠু তদন্ত করা হবে বলেও জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।