খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার দীঘিনালায় পাহাড়ি ও বাঙালির সংঘর্ষের জের ধরে মিছিল, ধাওয়া-পাল্টা-ধাওয়া, গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে।রাতের গোলাগুলি ও বিকেলের সংঘর্ষের ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত: শতাধিক। এ নিয়ে সদরসহ পুরো জেলায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।সহিংসতা এড়াতে শুক্রবার দুপুর ২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খাগড়াছড়ি পৌর এলাকায় ১৪৪ধারা জারি করেছে প্রশাসন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো: সহিদুজাজামান।নিহতরা হচ্ছে খাগড়াছড়ি সদরের জুনান চাকমা(২০), রুবেল ত্রিপুরা(৩০) ও দীঘিনালার ধনরঞ্জন চাকমা(৫০)।
খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুজন চন্দ্র রায় জানান, খাগড়াছড়ি সদর থানা এলাকায় পাহাড়ি ও বাঙালি সংগঠনের লোকজন আলাদা-আলাদাভাবে বিভিন্ন মোড়ে অবস্থান নেয় এবং উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ঘটনা ঘটে। সেখানে শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘœত হতে পারে প্রতিয়মান হওয়ায় খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার পৌরসভা এলাকায় শুক্রবার দুপুর ২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ফৌজদারী কার্যাবিধি ১৪৪ধারা জারী করা হলো।
মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে মামুন নামে একজনকে পিটিয়ে হত্যার জেরে বুধবার থেকে খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি-বাঙালি সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিকেলে দীঘিনালায় সাধারন শিক্ষার্থীদের মিছিল থেকে হামলা চালালে পরিস্থিতি সাম্প্রায়িক সসিংতায় রূপ নেয়।
পাহাড়ি-বাঙালির মধ্যে সংঘর্ষের এক পর্যায়ে দীঘিনালা লারমা স্কয়ারে অর্ধশতাধিক দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে জেলার বিভিন্ন স্থানে সড়কে অবস্থান নেয় পাহাড়িরা। রাতে পানছড়িতে সেনাবাহিনীর গাড়ি ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। জেলা সদরের নারায়নখাইয়া ও স্বনিভর বাজার এলাকায় সড়ক অবরোধ করে পাহাড়িরা। এ সময় ব্যাপক গুলির শব্দ শোনা যায়।
বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে খাগড়াছড়ির বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার ঘটনা ঘটে। সহিংসতায় খাগড়াছড়ি সদরে ২জন ও দীঘিনালায় একজন নিহত ও অপর ১৩জন আহত হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন, খাগড়াছড়ি জেলা সদর আধুনিক হাসপাতালে আরএমও ডাক্তার রিপল বাপ্পি। নিহতরা হচ্ছে খাগড়াছড়ি সদরের জুনান চাকমা(২০), রুবেল ত্রিপুরা(৩০) ও দীঘিনালার ধনরঞ্জন চাকমা(৫০)। ‘আহতদের মধ্যে ৯জন বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য ৪জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ঘটনার পর সেনবাহিনীর দীঘিনালা জোন অধিনায়ক লে. কর্নেল ওমল ফারুক, জেলা প্রশাসক মো: সজিদুজ্জামান ও পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল শুক্রবার দুপুরে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত দীঘিনালা বাজার হতাহতদের দেখতে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতলে যান। এ সময় তারা গুজবে কান না দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, শৃঙ্খলা বজায় রাখতে প্রশাসন,জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাদের সাথে নিয়ে সমন্বিত কাজ চলছে।
খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ওয়াদুদ ভূইয়া কোন ধরণের উস্কানি চক্রান্তে বিএনপির কর্মীদের পা না দেওয়ার ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের প্রতিরোধ করতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি পাহাড়ি-বাঙালি সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গ্রামে গ্রামে প্রহড়া বসানোর আহবান জানিয়েছেন।
তিনি অভিযোগ করেন, শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও তার দোসরা দেশের বিভিন্ন স্থানে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির পায়তারা করছে।