Thursday, November 21, 2024
Homeঅর্থনীতিমেগা প্রকল্প নয় ; অগ্রাধিকার জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে

মেগা প্রকল্প নয় ; অগ্রাধিকার জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে

গত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগ আমলে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নেওয়া প্রকল্পগুলো পুনর্বিবেচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নেওয়া প্রকল্প পুনর্বিবেচনা করা হবে। এখন আমাদের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর দিকে বেশি নজর দিতে হবে।
আর মেগা প্রকল্প নয়, জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। বুধবার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ও একনেক চেয়ারপারসন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। নতুন প্রকল্পের বিষয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, এখন থেকে মেগা প্রকল্প না নিয়ে জনগুরুত্বপূর্ণ ছোট প্রকল্প নেওয়া হবে। প্রকল্পের সব তথ্য সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। প্রকল্প নেওয়ার আগে সেগুলো নিয়ে ভালোভাবে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। বৈঠক শেষে বিকেল তিনটায় শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানান পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
বৈঠকে জানানো হয়, নতুন সরকারের প্রথম একনেক সভায় মোট চারটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ২২২ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৯৬৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা, প্রকল্প ঋণ থেকে পাওয়া যাবে ১০০ কোটি ১৬ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ১৫৮ কোটি ১৬ লাখ টাকা পাওয়া যাবে। প্রকল্পগুলোর মধ্যে দুটি সংশোধিত ও দুটি নতুন প্রকল্প রয়েছে।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, বিগত সময়ে একনেক সভায় বিপুল সংখ্যক প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সব ক্ষেত্রে বাস্তবায়নের গতি এক থাকত না। অপ্রয়োজনীয় রাজনৈতিক প্রকল্পও থাকত। বিগত সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সব প্রকল্প বাদ দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, চলমান প্রকল্পগুলো কোন্ পর্যায়ে রয়েছে সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। কাজেই আগের মতো একনেক সভা মানেই যেখানে অর্থ ব্যয়ের কর্মযজ্ঞ ছিল, এখন সে পরিধি কমে আসবে। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে একনেক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, দাতাগোষ্ঠী হাত খুলে টাকা দিতে চাচ্ছে। ইউএসএইড বলছে, তোমরা প্রকল্প তৈরি করো, আমরা টাকা দেব। যেসব প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল কিন্তু টাকা নেওয়া হয়নি এসব টাকা বাজেট সহায়তা দিতে চায় বিশ্বব্যাংক।
উপদেষ্টা আরও বলেন, সব দাতাগোষ্ঠী আমাদের নতুন চাহিদা জানতে চেয়েছে। কিছু প্রকল্পে ত্বরান্বিত হবে যা বৈদেশিক সাহায্যের প্রকল্প। অনেক প্রকল্প হিমাগারে আছে, মৃত প্রকল্পে ছাড় করে দেবে বিশ্বব্যাংক। ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ জানান, বিদেশী অর্থায়ন পাওয়া যাবে এমন প্রকল্প গ্রহণে গুরুত্ব দেবে সরকার। বহু বছর আগের অনেক প্রকল্প পড়ে আছে। এগুলোতে বিদেশী সহযোগীদের নজরদারি বেশি থাকে।

অনিয়ম করা যায় না। তাই ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে আগ্রহ কম থাকে। বর্তমান সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা ও অগ্রাধিকারের সঙ্গে মিলে এমন কিছু নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, নিজেদের জন্য গ্যাসকূপ খনন না করে কেন বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানির ব্যয়বহুল সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা বোধগম্য না। যেসব কূপ উন্নয়ন বা খননের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তাও দেওয়া হয়েছে বিদেশী কোম্পানিকে।

এসব ক্ষেত্রে কতটা জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। নিজেদের গ্যাসের সম্ভাবনা থাকতে এলএনজি আমদানি ভ্রান্ত নীতি। এতদিন যে অর্থনীতি চালিয়ে এসেছি এলডিসি উত্তরণের পর দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করতে হবে। শিক্ষা প্রযুক্তিতে আরও প্রকল্প নিতে হবে। মানব সম্পদে অনেক পিছিয়ে আছি আমরা।
তিনি আরও বলেন, বড় প্রকল্পগুলোতে সময় কেন বাড়ানো হলো এবং আন্তর্জাতিক মানদ-ের অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হলো সেগুলো যাচাই করা হবে। বর্তমান সরকার আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমাতে চায়। পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, আপাতত পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা স্থগিত থাকবে। কারণ বিগত সরকার কখনোই এই পরিকল্পনা অনুযায়ী বাজেট প্রণয়ন করেনি।

কাজেই পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এই মুহূর্তে দরকার নেই। নতুন করে রাজনৈতিক সরকার এলে তারা নতুন করে পরিকল্পনা করবে বলে জানান তিনি। নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, জিডিপি প্রবৃদ্ধি, সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং এসডিজি বাস্তবায়নের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার এ পরিকল্পনা তৈরি করছে না।
নতুন সরকারের প্রথম একনেক সভায় মোট চারটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ২২২ কোটি ১৪ লাখ টাকা। একনেকে অনুমোদিত চারটি প্রকল্প হলো : শিল্প ও শক্তি বিভাগের ‘বাখরাবাদ-মেঘনাঘাট-হরিপুর গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্প (১ম সংশোধিত)’, ‘দুটি মূল্যায়ন কাম উন্নয়ন কূপ (সুন্দলপুর-৪ ও শ্রীকাইল-৫) এবং দুটি অনুসন্ধান কূপ (সুন্দলপুর সাউথ-১ ও জামালপুর-১) খনন প্রকল্প’, আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের ‘মহিলাদের ক্ষমতায়ন প্রকল্প (২য় পর্যায়) (২য় সংশোধিত)’ ‘তথ্য আপা’ নামক প্রকল্প এবং কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্প (২য় পর্যায়)।’

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments