নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরী এক আতঙ্কের নাম বলে অভিযোগ উঠেছে। আওয়ামীলীগ সরকারের পট পরিবর্তনের পর একের পর এক ঘটনা প্রবাহে নানা সমালোচনা চলছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। হাট ঘাট দখল ঝুট ব্যাবসা নিয়ন্ত্রণসহ এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে তার বাহিনীর নানা তান্ডবের সমালোচনা চলছে ফতুল্লার সর্বত্র। খোদ তার বিরুদ্ধে উঠেছে চাঁদাবাজির অভিযোগ।
ফতুল্লা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হাসান মাহমুদ পলাশ অভিযোগ করেন, গত পাচঁ আগষ্টের পর থেকে এই অঞ্চলের গার্মেন্টস কারখানাসহ বিভিন্ন শিল্পকারখানায় আধিপত্য বিস্তার করার জন্য থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরি নেতৃত্বে তার ক্যাডার বাহিনীর সদস্যরা হুমকি ধমকি মহড়া দিয়ে আসছিলো। এসব সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে জেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের পরামর্শে ১১ সেপ্টেম্বর ইউনিয়ন বিএনপি শান্তি মিছিল বের করে। মিছিলটি শিরু হতেই সশস্ত্র হামলা চালায় একদল সন্ত্রাসী। সেই সন্ত্রাসী দলের নেতৃত্বে ছিল রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরীর অনুসারীরা। ওই ঘটনায় অন্তত ৪০ জন আহত হয়।
ঘন্টাব্যাপি তান্ডব চালিয়ে সন্ত্রাসীরা হোসেন গার্মেন্টর্স কারখানা ভাংচুরসহ কারাখানার ভেতরে প্রবেশ করে আগুন ধরিয়ে দেয়। বিসমিল্লাহ গাার্মেসন্টস কারখানার কাপড় গাড়ি থেকে নামিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। ভাচুর করা হয় রাস্তায় থাকা দুটি অটোরিক্স, বাজারের চার পাচঁটি দোকানপাট এবং একটি সোয়েটার ফ্যাক্টরী।
হোসেন গার্মেন্টস ও ডাইং মালিক শাহ আলম অভিযোগ করেন,গার্মেন্টসের জুট (পরিত্যক্ত কাপড়) ব্যবসা নেয়ার জন্য একজন নেতা ( রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরীকে ইঙ্গিত করেন) একটি তালিকা দেয়। সেই তালিকা অনুযায়ী ব্যবসা না দেয়ায় আমার প্রতিষ্ঠানে ভাংচুৃর ও আগুন দেয়া হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র দাবি করেন,বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতের ঘটনায় ৪/৫ টি মামলায় উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবে ব্যাবসায়ীসহ বেশ কয়েকজনের নাম রয়েছে এমন খসরা দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। অনেকের নাম যুক্ত করা হবে মামলায় এমন ভয়ভিতী দেখিয়ে রিয়াদ চৌধুরীর লোকজন টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন সূত্রগুলো। সন্ত্রাসী হামলা ও মামলার শিকার হতে পারেন এমন অনিরাপত্তার কারণে সূত্রগুলো নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। তাদের দাবি রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরী ও তার বাহিনী ফতুল্লা এলাকায় একটি আতঙ্কের নাম। বিগত আওয়ামী সরকার আমলে সে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে আতাত করে ভূমি দস্যুতা,চোরাই তেলের কারবারের সঙ্গে তারা জড়িয়ে পড়েন। রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরীর অনুসারী শৈকত,মামুন,বাবুল, আারীফ, হারুন,জাকির, সহ বেশ কয়েকজনের রয়েছে আলাদা আলাদা বাহিনী। এসব বাহিনীই নানা সময় নানা অপকর্মের নেতৃত্বে দিয়ে থাকে। সরকারের পট পরিবর্তনের পর বিভিন্ন হাট-ঘাট, পরিবহনের চাঁদাবাজি, ঝুট সেক্টরসহ নানা সেক্টরে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের জন্য মহরা অব্যাহত রেখেছে তারা। তারই ধারাবাহিকতায় ১১ সেপ্টেম্বর সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের বিরদ্ধে আয়োজিত শান্তি মিছিলে হামলা চালায় রিয়াদ চৌধুরীর অনুসারীরা। যে শান্তি মিছিলে রাজনৈতিক দলের নতাসহ ব্যাবসায়ী ও সাধারণ মানুষ যোগ দিয়েছিল। জনমনে আতঙ্ক তৈরী করে নিজেদের প্রভাব জাহির করতেই ওই মিছিলে অতর্কিত হামলা চালানো হয়। যে ঘটনায় অন্তত ৩০/৪০ জন আহত হয়। বিভিন্ন গার্মেন্টস কারখানায় ভাংচুর ও অগ্নি সংযোগের ঘটনাও ঘটানো হয়।
কতুবাইল টেক্সটাইলের প্রতিষ্ঠাতা আক্তার হোসেন অভিযোগ করেন ফতুল্লার হাট ঘাট থেকে শুরু করে পাগলা পর্যন্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দখল করে নেয় রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরীসহ তার লোকজন। ৭ আগস্ট আক্তার হোসেনের বাসায় গিয়ে দুই কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরী। এই চাঁদা দিলে আর কোন সমস্যা হবে না এমন প্রস্তাব করে। সেই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় এবং ১১ সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে শান্তি মিছিল করার আয়োজন করলে সেখানে হামলা চালায় তার বাহিনী। হামলা চালিয়ে ফ্যাক্টরী ও বাড়িতে ব্যাপক তান্ডব চালিয়ে ১৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি করেছে।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে ফোনে যোগাযোগ করা হলে রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরী বলেনে, এসব মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ। যুবলীগ নেতা মাসুদ ওরফে ওলা মাসুদসহ তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা এসব মিথ্য অভিযোগ ছড়াচ্ছে। যে সব অভিযোগ পেয়েছেন তার কোথাও আমি উপস্থিত আছি কিনা তা যাচাই করেন। আমি রাজনীতি করি আমার কাছে সব ধরনের লোক আসবে। কে কোথায় কি করলো সবতো আমার জানার বিষয় না। চাঁদা দাবির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন আমি যদি উল্টো দাবি করি যে ওরা আমার কাছে চাঁদা দাবি করেছে। তিনি দাবি করেন তার বিরুদ্ধ অভিযোগ তদন্ত করলে কোনটারই সত্যতা মিলবেনা। এগুলো রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ।
স্থানীয় সচেতন মহলের দাবি, প্রশাসন সমস্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যাবস্থা গ্রহণ করে এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনবে। ছাত্র জনতা প্রাণ দিয়ে যে বৈষম্য ও নৈরাজ্যের পরিবর্তন চেয়েছে তা নিশ্চই সফল হবে বলে আশাবাদ ব্যাক্ত করেন মহলটি।