নারায়ণগঞ্জের মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার ঘটনায় র্যাবের তদন্তে ঘাতক ওসমান পরিবার চিহ্নিত হলেও গ্রেপ্তার করা হয়নি। সাড়ে ১০ বছরেও
দাখিল করা হয়নি অভিযোগপত্র । উল্টো ত্বকী হত্যার বিচার চাওয়ায় সংস্কৃতিকর্মীদের ওপর হামলা, মামলা ও নির্যাতন চালিয়েছে ওসমান পরিবার। শুক্রবার বিকেলে নগরের চাষাঢ়ায় নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘ত্বকী হত্যা ও বিচারহীনতার সাড়ে ১১ বছর’ উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। সমাবেশের আয়োজন করে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ।
ত্বকী হত্যার পর থেকে সাড়ে ১১ বছর ধরে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ ও নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট ধারাবাহিকভাবে কর্মসূচি পালন করে আসছে। হত্যার বিচারের দাবিতে এমন টানা কর্মসূচি পালন বিশ্বে বিরল ঘটনা বলেও উল্লেখ করেন বক্তারা।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মদদে ওসমান পরিবার নারায়ণগঞ্জে খুন, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালালে ওসমান পরিবারও নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। অবিলম্বে ত্বকীর হত্যার নির্দেশদাতা শামীম ওসমান, তাঁর ছেলে অয়ন ওসমান, ভাতিজা আজমেরী ওসমানসহ জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।
নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি প্রদীপ ঘোষের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন সংগঠনের আহ্বায়ক ও নিহত ত্বকীর বাবা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি, খেলাঘর কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি রথীন চক্রবর্তী, দৈনিক খবরের পাতার সম্পাদক মাহবুবুর রহমান, ন্যাপের জেলা সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন, সিপিবি সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, বাসদ জেলার সমন্বয়ক নিখিল দাস, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি জিয়াউল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহা জুয়েল, ওয়ার্কার্স পার্টির জেলার সাধারণ সম্পাদক হিমাংশু সাহা, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির জেলার সভাপতি মাহমুদ হোসেন, গণসংহতি আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক তরিকুল সুজন প্রমুখ।
সমাবেশে রফিউর রাব্বি বলেন, ত্বকীকে টর্চার সেলে নিয়ে গজারির লাঠি দিয়ে পিটিয়ে অজ্ঞান করেছে। তারপর তার বুকের উপর উঠে গলা টিপে হত্যা করেছে। শরীরের কয়েকটি অঙ্গ থেতলে দিয়েছে-একটি চোখ উপড়ে নিয়েছে।
তিনি বলেন,গডফাদার মাফিয়া চক্র ওসমান পরিবারের মদদদাতা শক্তি হচ্ছে সরকার, প্রশাসন, পুলিশ। তাদের পেছন থেকে যখন সরকার, প্রশাসন, পুলিশ সরেছে, তখন তারা (ওসমান পরিবার) পালিয়েছে। এই মদদদাতা শক্তি না থাকলে নারায়ণগঞ্জের মানুষ লাঠি নিয়ে পিটিয়ে তাদের হত্যা করবেন। তিনি অভিযোগ করেন, ওসমান পরিবার ১৫ বছরে চাঁদাবাজি, লুটপাটসহ ডজনের বেশি মানুষকে হত্যা করেছে। ওসমান পরিবারের মাদক, খুন, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজিসহ সব অপকর্ম নারায়ণগঞ্জবাসী জানে, প্রশাসন জানে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও জানতেন। তারপরও তারা এই ওসমান পরিবারকে পাহারা দিত।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পাখির মতো গুলি করে মানুষকে হত্যা করা হয়েছে উল্লেখ করে রফিউর রাব্বি আরও বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশ, নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আমাদের দাবি আপনারা ত্বকী হত্যার বিচার করুন। একই সঙ্গে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি, তনু, চঞ্চল, আশিক, মিঠু, ভুল সাহাসহ নারায়ণগঞ্জে সংঘটিত সব হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে।’
জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে সমাবেশ শেষ করা হয়। পরে বিক্ষোভ মিছিল নগরের প্রধান বঙ্গবন্ধু সড়কের ২ নম্বর রেলগেট এলাকা প্রদক্ষিণ করে।
২০১৩ সালের ৬ মার্চ নারায়ণগঞ্জ নগরের শায়েস্তা খান রোডের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হয় কিশোর তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। পরে ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী শাখা খাল থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।