দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দীর্ঘদিন ধরে উপাচার্যদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছিল রাজনৈতিকভাবে। দক্ষতা ও যোগ্যতার চেয়ে উপাচার্যদের রাজনৈতিক অবস্থানকেই প্রাধান্য দেওয়া হতো এতদিন। অনেক সম্মানের পদ হওয়ার পরও এই উপাচার্যরা সরকারের মদদে নানাবিধ অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন। এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে বছরজুড়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও আন্দোলন করেছেন, ক্যাম্পাসগুলোতে ব্যাহত হয়েছে পড়ালেখা। গণ-অভ্যুত্থানের পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের পদত্যাগের কারণে অনেকগুলো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনের শীর্ষ এই পদটি শূন্য হয়ে গেছে। এক সঙ্গে এতগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়াটা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সামনে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আগের ধারা ভেঙে এ পদে অরাজনৈতিক একাডেমিক ও প্রশাসনিকভাবে দক্ষ ও যোগ্য জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকদের খুঁজছে শিক্ষা প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের পদ শূন্য প্রসঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ৪০টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয় অভিভাবকশূন্য। আমরা চাইব সত্যিকারের শিক্ষানুরাগী, যোগ্য ব্যক্তি যেন আসেন। শিক্ষক-ছাত্র সম্পর্ক- এটাও দলীয়করণ করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানে শিক্ষকদের সঙ্গে ছাত্রদের সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। এখন অনেক বড় বড় পরিবর্তন হচ্ছে, কিন্তু তার মধ্যেও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করে শৃঙ্খলার সঙ্গে আমরা যেন আবার ওই পরিবেশটা নিয়মমাফিক ফিরিয়ে আনতে পারি, সেই চেষ্টা করব।
জানা গেছে, ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ১৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য মো. সাহাবুদ্দিন। একই সঙ্গে পদত্যাগ করা উপচার্যদের মূল পদে (বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক) যোগদানের অনুমতিও দিয়েছেন। উপাচার্যবিহীন বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা প্রসঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, নতুন উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে আমরা একাডেমিক দক্ষতার পাশাপাশি প্রশাসনিক দক্ষতার দিকে নজর দেব।
জানা গেছে, দেশের পুরনো ও বড় চারটি বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৭৩ সালের রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ অনুযায়ী পরিচালিত হয়। সেখানে সিনেটে উপাচার্য নিয়োগের প্যানেল নির্বাচনের বিধান আছে। এ বিধান অনুসারে সিনেট সদস্যদের ভোটে উপাচার্য পদের জন্য তিনজনের প্যানেল নির্বাচিত হয়। নির্বাচিতদের মধ্য থেকে রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য যে কোনো একজনকে নিয়োগ দেন। এ চারটি বাদে বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সরকারের সরাসরি পছন্দে উপাচার্য নিয়োগ করা হচ্ছে।
শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, একাডেমিক স্কলার ও প্রশাসনিক দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং সততার অতীত ট্র্যাক রেকর্ড না দেখে উপাচার্য নিয়োগ করায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রায়ই নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নীল, সাদা, গোলাপি রঙের নানা ধারায় বিভক্ত। উপাচার্য নিয়োগের একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ও বিধান থাকা প্রয়োজন। সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমেও উপাচার্য নিয়োগ করা যেতে পারে।
রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি বাদ দিয়ে একাডেমিক দক্ষ ও প্রশাসক হিসেবেও যে দায়িত্ব নিতে পারবে- এমন ব্যক্তিদের উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া উচিত বলে মনে করেন শিক্ষাবিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, উপাচার্য নিয়োগ প্রক্রিয়া খুব স্বচ্ছ হওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ প্যানেল করা যেতে পারে। তারা দেখে উপাচার্য নিয়োগের সুপারিশ করবে।