কোটা সংস্কার আন্দোলনে সৃষ্ট সহিংসতায় নিহত ৪৪ পুলিশের তালিকা প্রকাশ করেছে বাহিনীটির সদরদপ্তর। রোববার পুলিশ সদরদপ্তরের মিডিয়া বিভাগ থেকে এই তালিকা প্রকাশ করা হয়।
এতে জানানো হয়, নিহত ৪৪ জনের মধ্যে কনস্টেবল ২১ জন, এএসআই সাত জন, এটিএসআই একজন, এসআই ১১ জন, নায়েক একজন, এবং তিন জন পরিদর্শক রয়েছেন।
তাদের মধ্যে পাঁচ আগস্ট নিহত হয়েছেন ২৪ জন পুলিশ। আর চার আগস্ট ১৪ জন নিহত এবং বাকি সদস্যরা বিভিন্ন সময় নিহত হন।
নিহত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ডিএমপির ১৪ জন, সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানার ১৫ জন, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী থানার দুই জন, কুমিল্লার তিতাস থানার দুই জন, চাঁদপুরের কচুয়া থানার একজন, হবিগঞ্জের বানিয়াচং থানার একজন, ঢাকা এসবির একজন, নারায়ণগঞ্জ পিবিআইয়ের একজন, ট্যুরিস্ট পুলিশ সদর দপ্তরের একজন, কুমিল্লা হাইওয়ে পুলিশের একজন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা থানার একজন, খুলনা মহানগর পুলিশের একজন, গাজীপুর মহানগর পুলিশের একজন এবং ঢাকা জেলার দুই জন পুলিশ সদস্য রয়েছেন।
এর মধ্যে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় ১৫ পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। চার আগস্ট সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন চলাকালে এনায়েতপুর থানায় ভাঙচুর ও আগুন দিয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ আবদুর রাজ্জাকসহ ১৩ পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও দুই জন মারা যান। এরপর থেকে বন্ধ হয়ে যায় থানার কার্যক্রম। সবশেষ শনিবার পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি।
নতুন অফিসার ইনচার্জ হিসেবে পরিদর্শক হাসিবুল্লা হাসিবকে দায়িত্ব দিয়ে ১০ আগস্ট থেকে বিধ্বস্ত এনায়েতপুর থানা সচল করা হয়। তাকে সহায়তার জন্য জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ১০ সদস্যকে সাময়িকভাবে যুক্ত করা হয়েছে। তবে বিধ্বস্ত ভবনে কার্যক্রম পরিচালনা করতে সমস্যা হওয়ায় এখনো থানার কার্যক্রম বন্ধ।
গত এক জুলাই থেকে শুরু হওয়া শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন এক পর্যায়ে সহিংসতায় গড়ায়। ১৬ জুলাই আন্দোলনে প্রথম প্রাণহানির ঘটনা হয়। ওই দিন ঢাকা, রংপুর ও চট্টগ্রামে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে ছয় জন নিহত হয়। পরে এই আন্দোলন গণ আন্দোলনে রূপ নেয়।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবি, পাঁচ আগস্ট পর্যন্ত এই গণ আন্দোলনে নিহতের সংখ্যা হাজারের বেশি। তবে এ বিষয়ে এখনও সুস্পষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। সম্প্রতি সাবেক স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এ ঘটনায় নিহত ৯০০ জনের বেশি। আহত কয়েক হাজার।
ছাত্র জনতার গণ আন্দোলনের মুখে গত পাঁচ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা।
ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর আট আগস্ট শপথ নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ওই দিন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন রাতে বঙ্গভবনের দরবার হলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সদস্যদের শপথবাক্য পাঠ করান।