ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর নায়েবে আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম, শায়খে চরমোনাই বলেন, যে মৌলিক স্লোগানের উপর দেশ স্বধীনে হয়েছিল সে কথা আমরা ভুলে গেছি। সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচার।
স্বাধীনতার পর থেকে মানুষের সাম্যতা দেখে নাই, মানুষের অধিকার ফিরে পায় নাই, সাম্যতা হলো সবাই সমান, চাকরির অধিকার সমান, কথা বলার অধিকার সমান, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা সমান। কিন্তু মানুষ সেই সাম্যতা পায় নাই। ধনীরা ধনী, আর গরিবেরা গরিব হিসেবেই থাকতে হয়েছে। যে দল করে সে মর্যাদা পাবে, যে নিজের দল করবে না, অন্যায় ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে কথা বলবে তাকে আয়না ঘরে ধুকে ধুকে মরতে হবে। কোথায় তাহলে মানবিক মর্যাদা? উপর মহল থেকে যে নির্দেশ আসতো সেভাবেই বিচার কার্য পরিচালনা করা হতো। ন্যায় বিচার এ জাতি দেখে নাই।
শুক্রবার বাদ জুমআ ডিআইটি চত্বরে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান পরবর্তী রাষ্ট্র সংস্কারে পীর সাহেব চরমোনাই ঘোষিত ৯ দফা প্রস্তাবনা বাস্তবায়নে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগরের যৌথ উদ্যোগে ডিআইটি চত্বরে গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি মাওলানা দ্বীন ইসলাম সাহেবের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর মুহতারাম মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কে এম আতিকুর রহমান, কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক মাও. লোকমান হোসাইন জাফরী, জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুফতি রেজাউল কারীম আবরার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, মুফতি ইসমাইল হোসেন সিরাজী, ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশ এর কেন্দ্রীয় সভাপতি, মাওলানা নেছার উদ্দিন, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ এর সেক্রেটারি জেনারেল মুনতাসির আহমদ, ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন বাংলাদেশ-এর জয়েন্ট সেক্রেটারি জেনারেল মুফতি মোস্তফা কামাল, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সভাপতি মুফতি মাসুম বিল্লাহ। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর সহ-সভাপতি যথাক্রমে হাফেজ আমিন উদ্দিন ও মুহা. নুর হোসেন, জেলা ও নগর সেক্রেটারি যথাক্রমে জাহাঙ্গীর কবির ও সুলতান মাহমুদ, জয়েন্ট সেক্রেটারি যথাক্রমে হাজী আমান উল্লাহ ও ডা. সাইফুল ইসলাম, জেলা ও নগর সাংগঠনিক সম্পাদক যথাক্রমে ফারুক আহমেদ মুন্সী ও মাও. শামসুল আলম, ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন বাংলাদেশ নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর সভাপতি যথাক্রমে মুহা. ওমর ফারুক ও মাওলানা হাবিবুল্লাহ হাবিব, ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশ নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে মাও. আব্দুর রশিদ ও মাও. মুহা. আনোয়ার হোসেন, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি যথাক্রমে মুহা. আশ্ররাফ ও ওমর ফারুক, জাতীয় শিক্ষক ফোরাম নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর সভাপতি মাওলানা রেজাউল করিম ও গাজী আলতাফ হোসেন, ওলামা মাশায়েক আইম্মা পরিষদের জেলা সাধারণ সম্পাদক মুফতি আল আমিন ও নগর সভাপতি মাওলানা শাহজালাল। শহর শাখার সভাপতি আ. সোবহান, সিদ্ধিরগঞ্জ থানার সভাপতি মুহা. বিল্লাল হোসেন ও বন্দর থানার সভাপতি আবুল হাসেম প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
মুফতি ফয়জুল করীম আরো বলেন, আগামী নির্বাচন PR (সংখ্যানুপাতিক হারে) পদ্ধতিতে দিতে হবে। সেখানে দলীয় কোন ব্যক্তিকে ভোট দিবে না। নির্বাচন হবে শুধু প্রতীকে। জনগণ তার পছন্দের দলীয় প্রতীকে ভোট দিবে। যে দল যত পারসেন্ট ভোট পাবে সে দল নির্ধারণ করবে তাদের মধ্য থেকে কারা কারা সংসদে যাবে। এরকম হলে দুর্নীতিবাজ বা কোন খারাপ লোক যদি সংসদে যায় তাহলে পরবর্তীতে জনগণ সেই প্রতীকে আর ভোট দিবে না। সুতরাং দলীয় কোন প্রভাব থাকবে না।
তিনি আরও বলেন, যারা রেমিটেন্স যোদ্ধা তাদেরকে যথাযথ সম্মান দিতে হবে। এয়ারপোর্টে তাদের সাথে সুন্দর ব্যাবহার ও সম্মানজনক শব্দ ব্যবহার করতে হবে। স্যার বলে সেম্বোধন করতে হবে। তারা দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য যুদ্ধ করছে। তাদের সকল মর্যাদা দিতে হবে। ছাত্রদেরকে রাষ্ট্রীয় খরচে পড়াশুনা করার অধিকার দিতে হবে। স্বৈরাচার পতন আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন, বিভিন্ন হত্যাকান্ডে যারা জড়িত, অন্যায়ভাবে যারা মানুষকে কারাবন্দী করে আয়না ঘরে নির্যাতন করেছে তাদের বিচার করতে হবে। আগামীতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
৯ দফা প্রস্তাবনা:
১. অনতিবিলম্বে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় এমন সকল রাজনৈতিক দল, পেশাজীবি ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিদের সাথে পরামর্শক্রমে অনুর্ধ্ব ১৫ সদস্য বিশিষ্ট অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার গঠন করতে হবে। যার মেয়াদ ৬ মাসের বেশি হতে পারবে না।
২. অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কেউ পরবর্তী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।
৩. গ্রহনযোগ্য তদন্ত কমিশন ও স্বতন্ত্র ট্রাইবুনাল গঠন করে জুলাই গণহত্যাকান্ডের বিচার করতে হবে। একই সাথে গত ১৬ বছরে সংগঠিত সকল রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক হত্যাযজ্ঞ, গণহত্যা, গুম ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার করতে হবে। তদন্ত সাপেক্ষে আহত/নিহত পরিবারকে ক্ষতিপূরণসহ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। এক্ষেত্রে যে সকল ব্যক্তি বা সংগঠন দোষী সাব্যস্ত হবে, তাদেরকে রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে।
৪. তদন্ত সাপেক্ষে গত ১৬ বছরে সকল দুর্নীতিবাজ ও বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের সকল সম্পত্তি ক্রোক করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করতে হবে এবং বিদেশে পাচারকৃত টাকা ফেরত আনবার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বিগত ১৬ বছরে যারা ক্ষমতায় ছিলেন তাদের সম্পদের হিসাব দিতে হবে। সকল দুর্নীতি ও টাকা পাচারের শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে।
৫. আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন, বিচার বিভাগসহ প্রজাতন্ত্রের যে সকল কর্মচারী আইন, সংবিধান, শপথ লঙ্ঘন করে অপেশাদার আচরণ করেছেন তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
৬. দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠির চিন্তা-চেতনা ও অনুভূতির বিরুদ্ধে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না।
৭. নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করতে হবে এবং অবাধ, সুষ্ঠ গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি (চ.জ) চালু করতে হবে।
৮. আওয়ামী দুঃশাসনের বিগত ১৬ বছরে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এদেশের সাধারণ শিক্ষাখাতের মান ও নৈতিকতা। এই ক্ষতি দ্রুত সময়ের মধ্যে কাটিয়ে উঠার লক্ষ্যে দেশপ্রেমিক শিক্ষাবিদ ও উলামায়ে কেরামের সমন্বয়ে একটি জাতীয় শিক্ষাকমিশন গঠন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৯. উলামায়ে কেরাম জাতির ধর্মীয় নেতৃত্ব প্রদান করেন। তারা উম্মাহর ঈমান-আমল রক্ষায় কাজ করেন। সেজন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে উলামায়ে কেরামদের মধ্যে থেকে প্রতিনিধি অবশ্যই থাকতে হবে।