শ্রেষ্ঠ কাজ সম্পর্কে একবার রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা।’ (বুখারি, হাদিস : ১৫১৯) একই প্রসঙ্গে অন্যবার জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘সময়মতো নামাজ আদায় এবং পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা।’ (বুখারি, হাদিস : ৭৫৩৪) আরেকবার বলেন, ‘শ্রেষ্ঠ বিষয় হলো, উত্তম চরিত্রের অধিকারী হওয়া।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৬৮২) এক হাদিসে বলেছেন, ‘শ্রেষ্ঠ কাজ হলো, ধৈর্যশীল হওয়া।’ (কানজুল উম্মাল, হাদিস: ৮৪০১)
আল্লাহ ও রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন : মানুষের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ কাজ হলো, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.)-এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। (বুখারি, হাদিস : ১৫১৯) আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের মর্ম হলো এ কথার স্বীকৃতি দেওয়া যে, আল্লাহ এক এবং একক। তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই। ইবাদতের উপযুক্ত একমাত্র তিনিই। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের মর্ম হলো, তিনি আল্লাহ কর্তৃক নির্বাচিত ও প্রেরিত। তিনি সর্বশেষ নবি, তাঁর পরে আর কোনো নবির আগমন ঘটবে না।
সময়মতো নামাজ আদায় : আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার পর মুমিন বান্দাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবশ্য পালনীয় ইবাদত হচ্ছে নামাজ। প্রাপ্তবয়স্ক সবার ওপর নির্ধারিত সময়ে নামাজ আদায় করা ফরজ। আল্লাহ বলেন, ‘মুমিনরা সফলকাম হয়ে গেছে। যারা নিজেদের নামাজে বিনয়-নম্রতা অবলম্বন করে। আর যারা নিজেদের নামাজের ব্যাপারে যত্নবান।’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত: ১-২ ও ৯)
পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার: পিতা-মাতার সঙ্গে ভালো ব্যবহার এবং তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা ইবাদত। তাদের কষ্ট দেওয়া গুনাহ। আল্লাহ বলেন, ‘পিতা-মাতার কোনো একজন অথবা তারা উভয়ে যদি তোমার কাছে বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদের বিরক্তিসূচক কিছু বলবে না এবং তাদের ধমক দেবে না; বরং তাদের সঙ্গে শ্রদ্ধার স্বরে কথা বলবে।’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত: ২৩)
উত্তম চরিত্রের অধিকারী হওয়া : কোমল ভাষা ও নরম স্বরে কথা বলা, শালীন বাক্য ব্যবহার করা, সব সময় হাস্যোজ্জ্বল থাকা, মার্জিত পোশাক পরিধান করা—এসব উত্তম চরিত্রের অন্তর্ভুক্ত। আনাস (রা.) বলেন, ‘আমি টানা দশ বছর রাসুলুল্লাহর খেদমতে নিয়োজিত ছিলাম। আমার কোনো কাজ সম্পর্কে তিনি কখনো ‘উহ্’ শব্দ পর্যন্ত উচ্চারণ করেননি। আমার কোনো কাজ দেখে কখনো বলেননি, তুমি এ কাজ কেন করলে? কিংবা কোনো কাজ না করলে কখনো বলেননি, তুমি কাজটা করলে না কেন?’ (বুখারি, হাদিস: ৬০৩৮)
ধৈর্যশীল হওয়া : মানুষকে তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে ধৈর্য নিয়ে দীর্ঘ সাধনা চালিয়ে যেতে হয়। কখনো কোনো বিপদে পড়লেও ধৈর্যধারণ করতে হয়। বান্দার প্রতি মহান সৃষ্টিকর্তার নির্দেশনাও এটাই। তিনি বলেন, ‘তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ৪৫)
দান : দানের মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা পৃথিবীর মানুষের মাঝে রিজিকের ভারসাম্য রক্ষা করেন। বিনিময়ে প্রতিদানও দিয়ে থাকেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান-সদকা করো, তবে তা কতই না উত্তম। আর যদি গোপনে ফকির-মিসকিনকে দান করে দাও, তবে আরও বেশি উত্তম। আর তিনি তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৭১)
জিকির : জিকিরকে সব ইবাদতের রুহ মনে করা হয়। জিকির বলতে বোঝায় সর্বদা সর্বক্ষেত্রে আল্লাহকে স্মরণ করা। আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা! তোমরা আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করো এবং সকাল-সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করো।’ (সুরা আহজাব, আয়াত: ৪১-৪২)
কোরআন তেলাওয়াত: সওয়াব লাভের অন্যতম মাধ্যম কোরআন তেলাওয়াত। কোরআন তেলাওয়াতে হৃদয় পরিষ্কার হয়। আল্লাহকে পাওয়া যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোরআনের একটি হরফ পাঠ করল, তার জন্য রয়েছে একটি সওয়াব। আর একটি সওয়াব ১০ সওয়াব সমতুল্য।’ (তিরমিজি, হাদিস: ২৯১০)
দ্বীনি জ্ঞান অন্বেষণ : মানবজাতির মাঝে একের ওপর অপরের শ্রেষ্ঠত্বের অন্যতম মাধ্যম হলো দ্বীনি জ্ঞান। প্রকৃত ইলমের মাধ্যমে মানুষ সত্য ও মিথ্যার মাঝে পার্থক্য বুঝতে পারে, হক ও বাতিলের মাঝে রেখা টেনে দিতে পারে। এ বিশেষত্বের কারণেই রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘ধর্মীয় বিষয়ে পাণ্ডিত্য অর্জনকারী একজন ব্যক্তি শয়তানের মোকাবিলায় হাজারও ইবাদতগুজার মানুষের চেয়েও অধিকতর কঠোর।’ (তিরমিজি, হাদিস: ২৬৮১)
বিনয় : বিনয়, নম্রতা ও ভদ্রতা আদর্শ মানুষের অলংকার হিসেবে গণ্য করা হয়। আল্লাহতায়ালা নবিজি (সা.)-কে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনি আপনার অনুসারী মুমিনদের প্রতি সদয় থাকবেন।’ (সুরা শুয়ারা, আয়াত: ২১৫)
বিনয়ী মানুষদের প্রশংসা করে কোরআন মাজিদের অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘দয়াময় আল্লাহর বান্দা তো তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে।’ (সুরা ফুরকান, আয়াত: ৬৩-৬৬)
লেখক : আলেম ও হাদিস গবেষক