জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, ‘আমরা এক ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্ত হয়ে যদি আরেক ফ্যাসিবাদের মুখে পড়ি, তাহলে তো হবে না।ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও এখন আবার বিভিন্ন ধরনের ফ্যাসিবাদের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে বলে মনে করেন তিনি। শনিবার বিকেলে রাজধানীর কাঁটাবনের পাঠক সমাবেশে ‘সংকটে গণতন্ত্র: সামরিক শাসনোত্তর বেসামরিক শাসনের সমস্যা’ শীর্ষক বইয়ের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে আনু মুহাম্মদ এসব কথা বলেন। বইটির লেখক সাংবাদিক আমীর খসরু ও প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অনন্যা প্রকাশনী আলোচনাটির উদ্যোগে এ আলোচনা সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ আরো বলেন, দেশে অনেক জায়গায় নারীদের ওপর আক্রমণ হচ্ছে। তাঁদের পোশাক নিয়ে আক্রমণাত্মক বক্তব্য আসছে। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হচ্ছে। বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে শ্রেণি, জাতি, লিঙ্গ ও ধর্মীয় বৈষম্য দূর করা দরকার। এ ক্ষেত্রে বড় ধরনের আলোচনা এবং জাতীয় সংলাপের মধ্যে যেতে হবে। একটি পরিষ্কার রূপকল্প প্রণয়ন করতে হবে।
সভায় সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘আমরা স্বৈরশাসনোত্তর গণতন্ত্র সংহত করার সমস্যার মধ্যে আছি। আমরা বিপ্লবী আকাঙ্ক্ষা নিয়ে নতুন সরকার গঠন করেছি। কিন্তু সরকার গতানুগতিক আমলাতন্ত্রের ওপর নিজেদের নির্ভরশীলতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
‘আমরাই তো দায়িত্ব নিয়ে বলছি, আমরা নতুন সমাজ গড়ার জন্য প্রস্তুত। আমাদের এই শক্তিকে, আমাদের এই ইমোশনকে (আবেগ) কীভাবে কাজে লাগাবে, কোন উপায়ে আমাদের এনগেজ (সম্পৃক্ত) করবে, সেই দিকনির্দেশনাগুলো কোথায়?’
আলোচনায় অংশ নেয়া,লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আমিনুল করিম বলেন, ১৯৭১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় নিজের হাত থেকে ছাড়েননি। শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়া কিংবা এরশাদ—প্রত্যেকেই প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে নিজেদের হাতে রেখেছিলেন। এখনকার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় নিজের কাছে রেখেছেন। আমিনুল করিম আরো বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত মতামত হলো, রাজনৈতিক নেতারা হয়তো সেনাবাহিনীকে একটু সন্দেহ করছেন। কোনো রাজনৈতিক রেজিম (শাসনামল) যদি শক্তিশালী হয়, তাহলে সামরিক বাহিনী কখনোই ক্ষমতা নিতে আসবে না। এখনকার সামরিক বাহিনী ক্ষমতা নিতে চায় না।’
সাংবাদিক আমীর খসরু-নির্বাচনের সময় নিয়ে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের বক্তব্যের বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘খুবই দুঃখের সঙ্গে আমাকে বলতে হচ্ছে, যে বিষয়টা ড. ইউনূস বা বেসামরিক প্রশাসনের কাছ থেকে আমরা শুনতে চেয়েছিলাম, তা শুনতে হচ্ছে সেনাপ্রধানের কাছ থেকে।
এক ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্ত হলেও বিভিন্ন ধরনের ফ্যাসিবাদের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে- আনু মুহাম্মদ
RELATED ARTICLES