সুরা ইয়াসিন প্রত্যেক মুসলমানের কাছে অসম্ভব প্রিয়। রাসুল (সা.)-এর বর্ণনায় জানা যায়, সুরা ইয়াসিন কোরআনের হৃদয়। এতে আছে কোরআনের সারকথা। তিরমিজি শরিফে এমন একটি বর্ণনা রয়েছে, যে এক বসায় সুরা ইয়াসিন পাঠ করবে, তার গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। মৃত্যুপথযাত্রী ব্যক্তির শিয়রে সুরা ইয়াসিন পাঠ করা হয়।
সুরা ইয়াসিনে একটি প্রারম্ভিকা, তিনটি অংশ ও একটি উপসংহার রয়েছে। প্রারম্ভিকা অংশে আল্লাহ স্বল্প বাক্যে পুরো কোরআনের পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। ‘ইয়া-সিন’, এই যুগল অক্ষরে সুরাটি শুরু হয়েছে। এর পরপরই কোরআনকে উল্লেখ করে বলা হলো, ‘ওয়াল কোরআনিল হাকিম’, অর্থাৎ ‘বিজ্ঞানময় কোরআনের কসম’। এরপর নবী (সা.)-কে নিয়ে বলা হলো, ‘ইন্নাকা লামিনাল মুরছালিন’, অর্থাৎ ‘তুমি নিঃসন্দেহে রাসুলদের অন্তর্ভুক্ত’। রাসুল কী করছেন? ‘আলা-সিরাতিম মুছতাকিম’। সরল-সোজা পথ অবলম্বন করছেন। রাসুল জানেন কোন পথে চলতে হবে। তাই তিনি আমাদের পথপ্রদর্শক।
সুরা ইয়াসিনের প্রথম অংশে অতীত-ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। দ্বিতীয় অংশে বর্তমান বা আমাদের চারপাশের নিদর্শনগুলো নিয়ে কথা বলা হয়েছে। তৃতীয় অংশে বলা হয়েছে ভবিষ্যৎ বা আমাদের পরিণতি সম্পর্কে। এর বিষয় কিয়ামত, জান্নাত ও জাহান্নাম।
প্রতিটি অংশে যে বিষয়টি খুবই প্রাসঙ্গিক তা হলো মৃত ব্যক্তির পুনরুত্থান এবং সেই পুনরুত্থানের পর আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা। এটিই সুরা ইয়াসিনের মূল শিক্ষা। এই কারণেই মৃত্যুপথযাত্রীর সামনে সুরা ইয়াসিন পড়ার ওপর এত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এর উদ্দেশ্য ব্যক্তির রুহকে শরীর থেকে আলাদা হওয়ার জন্য প্রস্তুত করা।
সুরা ইয়াসিনের ভূমিকা অংশে জীবন ও মরণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথম অংশে যে ঘটনার কথা এল, সেখানেও জীবন ও মৃত্যু নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। মধ্যভাগে আল্লাহ আমাদের চারপাশের নিদর্শন উল্লেখ করেছেন। উল্লেখ করেছেন তিনটি বিষয়। প্রথমত, তাদের জন্য নিষ্প্রাণ ভূমির একটি নিদর্শন, অর্থাৎ পৃথিবী। দ্বিতীয়ত, বেহেশত। তৃতীয়ত, মানবসত্তা সৃষ্টির রহস্য।
আমরা কেউ কেউ হয়তো একটি ঘটনা শুনেছি। আস ইবনে ওয়ায়েল মক্কা উপত্যকা থেকে একটি পুরোনো হাড় কুড়িয়ে এনে সেটি স্বহস্তে ভেঙে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলল, এই যে হাড়টি চূর্ণ-বিচূর্ণ অবস্থায় দেখছেন, আল্লাহ কি তাকেও জীবিত করবেন? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, হ্যাঁ, আল্লাহ তোমাকে মৃত্যু দেবেন, পুনরুজ্জীবিত করবেন। তখন আল্লাহ একটি আয়াত নাজিল করলেন, ‘মানুষ আমার ক্ষমতা সম্পর্কে অদ্ভুত কথা বানায়, অথচ সে নিজের সৃষ্টির কথা ভুলে যায় এবং বলে, হাড়ে আবার প্রাণ দেবে কে যখন তা পচে গলে যাবে?’ (সুরা ইয়াসিন, আয়াত: ৭৮)
ড. ইয়াসির কাদিরের বক্তৃতা অবলম্বনে। সূত্র:প্রথমআলো।