বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচি ঘিরে সারা দেশে সংঘাত–সংঘর্ষ, গুলি, পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় অন্তত ৯৯ জন নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১৪ জন পুলিশ সদস্য। সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় ১৩ জন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন।
আজ দিনভর সংঘর্ষে নরসিংদীতে ৬ জন, ফেনীতে ৮ জন, লক্ষ্মীপুরে ১১ জন, সিরাজগঞ্জে ১৩ পুলিশসহ মোট ২২ জন, রাজধানী ঢাকায় ৮ জন, বগুড়ায় ৫ জন, মুন্সিগঞ্জে ৩ জন, মাগুরায় ৪ জন, ভোলায় ৩ জন, রংপুরে ৪ জন, পাবনায় ৩ জন, সিলেটে ৫ জন, কুমিল্লায় পুলিশ সদস্যসহ ৩ জন, শেরপুরে ৩ জন, জয়পুরহাটে ২ জন, হবিগঞ্জে ১জন, ঢাকার কেরাণীগঞ্জে ১ জন,কিশোরগঞ্জে ৫ জন সাভারে ১ জন ও বরিশালে ১ জনসহ ৯৯ জন নিহত হয়েছেন। দিনভর এসব সংঘর্ষ ও সহিংশতায় সাংবাদিকসহ অন্তত ৫০০ জন আহত হয়েছে।
রাজধানী ঢাকায় নিহত ৮ জন:
রোববার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এসব ঘটনায় আটজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তাঁদের মধ্যে একজন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের নেতা এবং তিনজন শিক্ষার্থী বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
নিহত আওয়ামী লীগ নেতার নাম আনোয়ারুল ইসলাম। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য। আনোয়ারুল ইসলাম উত্তরা এলাকায় আওয়ামী লীগের অবস্থান কর্মসূচিতে ছিলেন। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার মধ্যে বেলা একটার দিকে উত্তরার রাজলক্ষ্মী এলাকার লতিফ এম্পোরিয়াম মার্কেটে আশ্রয় নেন। এ সময় বিক্ষোভকারীরা গিয়ে তাঁর ওপর হামলা করেন। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।
দুপুরে রাজধানীর জিগাতলা এলাকায় সংঘর্ষের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। তাঁর নাম আবদুল্লাহ সিদ্দিকী (২৩)। তিনি রাজধানীর হাবিবুল্লাহ বাহার ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী। বিকেল পৌনে চারটার দিকে আবদুল্লাহকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। আবদুল্লাহ পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজার এলাকার কলতা বাজারের বাসিন্দা। তাঁর বাবার নাম আবু বকর।
কারওয়ানবাজার এলাকায় সংঘর্ষে রমিজ উদ্দিন রূপ (২৪) নামের বেসরকারি ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটের দিকে শফিকুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, রমিজের বাড়ি রংপুরে। তাঁর বাবার নাম মো. রাহেল।
এদিকে সন্ধ্যায় আনুমানিক ২৫ বছরের এক যুবকের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন কয়েকজন। নিহত ওই ব্যক্তির নাম–পরিচয় জানা যায়নি। তাঁর মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
রাত ৮টার দিকে যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকা থেকে জুয়েল (২৮) নামে এক যুবকের মরদেহ ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসেন কয়েকজন পথচারী। তাঁর বুকের বাঁ পাশে গুলির চিহ্ন রয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে। চিকিৎসকেরা তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করার পর মরদেহ নিয়ে যান ওই যুবকেরা।
এছাড়া রাজধানীর জিগাতলা এলাকায় সংঘর্ষের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া এক কিশোরের লাশ রাতে ঢাকা মেডিকেলে আনা হয়। চিকিৎসকেরা মৃত্যু নিশ্চিত করার পর তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয়। ওই কিশোরের নাম–পরিচয় জানা যায়নি।
এর আগে বিকেলে ফার্মগেট এলাকায় সংঘর্ষে তাহিদুল ইসলাম (২২) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি গত বছর সরকারি কবি নজরুল কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির চেষ্টার পাশাপাশি মহাখালীর ডিএইট কনসালট্যান্ট লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানে অফিস সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে জানান, মৃত অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। তাহিদুলের মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছেন।
বিকেলে গুলিস্তান থেকে জহির উদ্দীন নামের এক ব্যক্তিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরীক্ষার পর চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। তাঁর বাড়ি কুমিল্লায় বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। প্রাথমিকভাবে তাঁর বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানায়, আজ বেলা তিনটা পর্যন্ত রাজধানীর শাহবাগ, শনির আখড়া, নয়াবাজার, ধানমন্ডি, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, পল্টন, প্রেসক্লাব এবং মুন্সীগঞ্জ থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ১১১ জনকে এখানে আনা হয়। এর মধ্যে ৩৩ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে
সিরাজগঞ্জে ১৩ পুলিশসহ ২২ জনকে পিটিয়ে হত্যা:
সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় ১৩ পুলিশ সদস্যকে হত্যা করেছে আন্দোলনকারীরা। পুলিশ সদরদপ্তর থেকে নিহতের এই সংখ্যা জানানো হয়েছে। পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি বিজয় বসাক বলেন, আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে এসে এনায়েতপুর থানায় হামলা ও ভাঙচুর চালায়। একপর্যায়ে তারা থানায় আগুন দেয় এবং সেখানে থাকা পুলিশ সদস্যদের পিটিয়ে হত্যা করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, বেলা ১১টার দিকে আন্দোলনকারী থানার দক্ষিণে জমায়েত হয়। সেখান থেকে আন্দোলনকারীরা থানার সামনে আসার পর পুলিশ তাদের বাধা দেয়। তখন দুই পক্ষের মধ্যে ঘণ্টাখানেক ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। আন্দোলনকারীরা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করলে জবাবে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও গুলি ছোঁড়ে। একপর্যায়ে আন্দোলনকারীরা থানার ভেতরে ঢুকে পড়ে আগুন দেয়। এরপর পুলিশ সদস্যদের ধরে ধরে পিটিয়ে হত্যা করে। এর বাইরেও জেলার বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের সংঘাতে আরও ৯ জন মারা গেছেন।
সিরাজগঞ্জ-২ আসনের এমপি জান্নাত আরা হেনরী, সাবেক এমপি হাবিবে মিল্লাত মুন্না, সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের এমপি চয়ন ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ তালুকদার, সহ-সভাপতি বিমল কুমার দাসের বাড়িতে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
নরসিংদী:
আন্দোলনকারীদের সহিংশতায় নরসিংদীতে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও শ্রমিক লীগের ছয় নেতাকর্মী নিহত হয়েছে। রোববার দুপুরে মাধবদী পৌরসভার বড় মসজিদ এলাকায় এই ঘটনা ঘটেছে। নিহতরা হলেন- সদর উপজেলার চরদিগলদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন শাহীন (৪০), নরসিংদী সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের ছোট ভাই যুবলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন (৩৮)। নরসিংদী জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য শ্রমিকলীগ নেতা মনিরুজ্জামান ভূইয়া ওরফে নাতি মনির (৪২), শ্রমিক লীগ নেতা আনিছুর রহমান সোহেল (৪০), আওয়ামী লীগ নেতা কামাল হোসেন (৩৮) এবং আওয়ামীলীগ কর্মী গোলাপ (৪০)।
রংপুর:
রোববার সকালে রংপুর টাউন হলে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। আর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন পায়রা চত্বর ও জাহাজ কোম্পানির মোড়ে। এক পর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয় । এতে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা খসরু মিয়াসহ আরও ৩ জন মারা যান ।
নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন রংপুর সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও পরশুরাম থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি হারাধন রায় ও তাঁর ভাগনে শ্যামল রায়। সংঘর্ষ চলাকালে শহরের কালিবাড়ি গেটের পাশে তাঁদের লাশ পড়ে থাকতে দেখে লোকজন। বাকি দুজন হলেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য খায়রুল ইসলাম খসরু ও জেলা যুবলীগের কর্মী মাসুম হোসেন। রংপুর মেডিকেলে কলেজ হাসপাতাল মর্গের দায়িত্বে নিয়োজিত সর্দার আবদুল জলিল তাঁদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মাগুরা:
মাগুরাতেও আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান ছাত্রদল নেতা মেহেদী হাসান রাব্বি, দুই শিক্ষার্থী ফরহাদ হোসেন ও সুমন শেখ। আরও একজন নিহত হয়েছেন, তবে তার পরিচয় পাওয়া যায়নি।
মুন্সীগঞ্জ:
মুন্সীগঞ্জ সুপার মার্কেট ও কৃষি ব্যাংক মোড় এলাকায় জড়ো হন আন্দোলনকারীরা। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের কর্মীরা সড়কে অবস্থান নেন। একপর্যায়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে দুই নির্মাণ শ্রমিকসহ তিনজনের মৃত্যু হয়।
সিলেট:
সিলেটের গোলাপগঞ্জে বিক্ষোভকারী এবং পুলিশ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘর্ষ চলাকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে মোট পাঁচ জন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন, গোলাপগঞ্জের দত্তরাই গ্রামের মিনহাজ আহমদ (২৬), একই উপজেলার ঢাকা দক্ষিণ ইউনিয়নের নিশ্চিন্ত গ্রামের নাজমুল ইসলাম (২২), সানি আহমদ (১৮), তাজ উদ্দিন (৪০) ও গৌছ উদ্দিন (২৯)।
ফেনী:
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচি ঘিরে ফেনীতে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে অন্তত আটজনের মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৬ জনের নাম জানা গেছে। তাঁরা হলেন ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার উত্তর জায়লস্কর গ্রামের সরোয়ার জাহান মাসুদ, ফেনী সদর উপজেলার কাশিমপুর এলাকার বাসিন্দা শিহাব উদ্দিন, গাজী ক্রস রোডের ইশতিয়াক আহমেদ, সাইদুল হক; সোনাগাজী উপজেলার মান্দারী গ্রামের বাসিন্দা মো. সাকিব ও ফাজিলপুর এলাকার বাসিন্দা মো. সাঈদ। নিহত অপর দুজনের নাম জানা যায়নি।
ফেনী ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আসিফ ইকবাল (আরএমও) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গণমাধ্যমকে। তিনি আরো জানান নিহত ব্যক্তিদের বয়স ১৭ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। সবাই গুলিতে নিহত হয়েছেন।
লক্ষ্মীপুর:
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচি ঘিরে লক্ষ্মীপুরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে যুবলীগ ও শিক্ষার্থীসহ ১১ জন নিহত হয়েছেন। সংঘর্ষে কমপক্ষে ৬০ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। লক্ষ্মীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) মো. সোহেল রানা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
রবিবার বেলা ১২টার দিকে জেলা শহরের উত্তর তেমুহনী থেকে ঝুমুর পর্যন্ত এলাকায় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ চলাকালে তিনটি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিকের বেশি মানুষ। নিহত ১১ জনের মধ্যে আফনান পাটওয়ারী, কাউছার, সাব্বির ও মিরাজের নাম জানা গেছে। বাকি ৭ জনের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে বলে জানান সদর থানার ওসি।
বগুড়া:
বগুড়ায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দিনভর পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষের সময় গুলিতে সদরে চার জন এবং দুপচাঁচিয়া উপজেলায় একজন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে দুই শতাধিক পুলিশ ও আন্দোলনকারী আহত হন।
নিহতরা হলেন– বগুড়ার কাহালু উপজেলার বীরকেদার ইউনিয়নের মণ্ডলপাড়া গ্রামের শামসুল ইসলামের ছেলে ও নওগাঁর বদলগাছীর বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজের সম্মান পঞ্চম বর্ষের ছাত্র মনিরুল ইসলাম মনির (২২); গাবতলীর জিল্লুর রহমান (৪৫), সদর উপজেলার ইসলামপুর জায়গড়ি এলাকার শিক্ষক সেলিম রেজা (৪৫)। অপর দুজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। একজন শহরের সাতমাথায় ডাকবাংলোর সামনে, একজন ৩ নম্বর রেল গুমতির কাছে, একজন শহরের অন্যত্র এবং অপরজন দুপচাঁচিয়ায় নিহত হয়েছেন।
বগুড়া শজিমেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আবদুল ওয়াদুদ জানান, গুলিতে নিহত তিন জনের মরদেহ মর্গে রয়েছে। হাসপাতালে ২২ জন ভর্তি হয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, গুলিতে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।
ভোলা:
ভোলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও পুলিশের সংঘর্ষে নিহত হয়েছে ৩ জন। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে ভোলা সদর হাসপাতাল সূত্রে। জেলা বিএনপির দাবি, তাদের দুই কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। অন্যদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুল কাদের মজনু বলেন, যুবলীগের কর্মী মো. মিলনকে পিটিয়ে হত্যা করেছে বিক্ষোভকারীরা।
পাবনা:
পাবনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে গুলিবিদ্ধ তিন শিক্ষার্থী পাবনা জেনারেল হাসপাতালে মারা গেছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. রফিকুল হাসান। নিহতরা হলেন জেলার হাজীরহাট এলাকার আবুল কালামের ছেলে আরাফাত হোসেন মাহবুবুল (১৬), বলরামপুর গ্রামের জাহিদুল ইসলাম (১৯) ও এডওয়ার্ড কলেজের শিক্ষার্থী ফাহিম হোসেন (১৭)। পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম জানান, আন্দোলনকারী শিক্ষাথীরা শান্তিপূর্ণ ভাবে তাদের ঘোষিত কর্মসূচী পালন করছিলেন। এ সময় পেছন দিকে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এর মধ্যেই শিক্ষার্থীদের ওপর গুলিবর্ষণ করা হয়।পুলিশ ধাওয়া দিলে তারা পিছু হটে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অতিরিক্ত আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। কারা গুলিবর্ষণ করেছে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।তিনি আরো জানান, একজনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মারা গেছেন আরো দুজন।
কুমিল্লা:
কুমিল্লায় সংঘর্ষে পুলিশ সদস্যসহ নিহত ৩ জন। দেবিদ্বার আজগর আলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে সংঘর্ষে ১ জন নিহত হয়েছেন। নিহত যুবকের নাম আব্দুল রাজ্জাক রুবেল (২৬)। তিনি দেবিদ্বার পৌর এলাকার বারেরা গ্রামের মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে। রুবেলের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আলী এহসান। তিনি বলেন, রুবেলে মরদেহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স আনা হলে পরীক্ষা করে দেখি তার মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, দেবিদ্বার নিউ মার্কেট স্বাধীনতা চত্বরে অবস্থা নেয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মী। স্বাধীনতা চত্বর থেকে কিছুটা দূরে অবস্থান নেন বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা। এ সময় দুগ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এর মধ্যে গুলিবিদ্ধ হন রুবেল। এদিকে, কুমিল্লার ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির এক পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। হাইওয়ে রিজিয়ন কুমিল্লার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. খায়রুল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, নিহত কনস্টেবলের নাম মো. এরশাদ আলী। অপরদিকে, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালের পরিচালক ফজলে রাব্বি বলেন, সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ অজ্ঞাতনামা একজনের মরদেহ কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
শেরপুর:
শেরপুরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে ৩ জন নিহত হয়েছেন। শেরপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আনোয়ার হোসেন নিহতের তথ্য নিশ্চিত করেছেন। শহরের তিনাআনি বাজার এলাকায় শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করলে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা জানায়, আন্দোলনকারীদের কয়েকজন পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করার চেষ্টা করে। এসময় পুলিশ আন্দোলনকারীদের উপরে গাড়ি উঠিয়ে দেয়। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন। আহতদের শেরপুর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তিনজনকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত দুইজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। তারা হলেন—জেলা শহরের বাসিন্দা তুষার (২৪) এবং জেলা সদরের পাকুড়িয়া চৈতনখিলার মাহবুব (৩০)। নিহত অপর একজনের নাম জানা যায়নি।
জয়পুরহাট:
সরকার পতনের ১ দফা দাবিতে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে জয়পুরহাট জেলা শহর। সংঘর্ষে মেহেদী হাসান (২১) নামে এক আন্দোলনকারী ও জেলা যুবলীগের সাবেক সহ সভাপতি রফিকুজ্জামান রহিম (৫২) গুলিবিদ্ধ হয়। আশংকাজনক অবস্থায় বগুড়ায় নেয়ার পথে তারা মারা যান।
হবিগঞ্জ:
হবিগঞ্জে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে আজ রোববার রিপন শীল (২৭) নামের এক তরুণ নিহত হয়েছেন। তাঁর চোখের ওপর গুলির চিহ্ন দেখা গেছে। তিনি শহরের ইনাতাবাদ এলাকার বাসিন্দা। কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহত রিপনের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, আজ দুপুর ১২টার দিকে আন্দোলনরত কয়েক হাজার শিক্ষার্থী হবিগঞ্জ বৃন্দাবন সরকারি কলেজের সামনে জড়ো হন। প্রায় দুই ঘণ্টা বৃন্দাবন সরকারি কলেজের সামনে অবস্থানের পর শিক্ষার্থীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহরের প্রধান সড়কের উত্তর দিকে চৌধুরী বাজার অভিমুখে রওনা হন। মিছিলকারীরা শহরের পৌর টাউন হলের সামনে পৌঁছালে জেলা আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীরা আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকেন। এ সময় আন্দোলনকারীরা আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের ধাওয়া দিলে তাঁরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও হবিগঞ্জ সদর-৩ আসনের সংসদ সদস্য আবু জাহিরের বাসায় আশ্রয় নেন। বাসার ভেতর থেকে তাঁরা আবারও আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালালে এ সময় শহরের প্রধান সড়কে গুলিবিদ্ধ হন রিপন শীল। তাঁকে গুরুতর আহত অবস্থায় হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন।
কেরানীগঞ্জ:
ঢাকার কেরানীগঞ্জে এক দফা দাবিতে অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যুবলীগ–ছাত্রলীগের সংঘর্ষ হয়। এতে ইফতি (৩২) নামে একজন মারা গেছেন। তিনি উপজেলার কালিন্দী ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
কিশোরগঞ্জ:
কিশোরগঞ্জ জেলা শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন আন্দোলনকারীরা। এতে সংঘর্ষে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন- কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার যশোদল ইউনিয়নের বীরদামপাড়া গ্রামের আলম মিয়ার স্ত্রী অঞ্জনা আক্তার (৩৪), একই এলাকার মতিউর রহমানের ছেলে জুলকার মিয়া (৩৫), বাজিতপুর উপজেলার দিঘিরপাড় এলাকার জালাল উদ্দিনের ছেলে আব্দুল কদ্দুস (৩৪), কিশোরগঞ্জ শহরের কালীবাড়ি মোড়ের ব্যবসায়ী করিমগঞ্জ উপজেলার সিরাজ উদ্দিনের ছেলে আব্দুল্লাহ (৫০) ও কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার কর্শাকড়িয়াইলের ইবাদ আলীর ছেলে যুবলীগ নেতা মবিন মিয়া (৩৪)।
সাভার:
সাভারের আশুলিয়ায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক তরুণের মৃত্যু হয়েছে । এছাড়া গুলিবিদ্ধ আরও একজনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। মরদেহটি ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়। নিহতের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। তার বয়স আনুমানিক ৩০ বছর। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স জানায়, দুপুর দেড়টার দিকে ৪-৫ জন তরুণ আনুমানিক ৩০ বছর বয়সী এক তরুণের মরদেহ হাসপাতালে নিয়ে আসে। মরদেহটি হাসপাতালে রেখে তারা চলে যায়।