Sunday, November 24, 2024
Homeকৃষি খবরবণ্যায় বিশুদ্ধ পানির সংকট ; বাড়ছে রোগব্যাধি ; মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫২...

বণ্যায় বিশুদ্ধ পানির সংকট ; বাড়ছে রোগব্যাধি ; মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫২ ; কৃষি ও প্রাণী সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি

উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও ভারি বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট বন্যায় দেশের ১১ জেলার মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫২ জনে। এর মধ্যে ফেনীতেই সবচেয়ে বেশি ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। জেলার ছাগলনাইয়া, পরশুরাম, ফুলগাজী, সোনাগাজী, ফেনী সদর ও দাগনভূঞা উপজেলা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। বেশিরভাগ বাড়িঘর ও দোকানপাট ডুবে গেছে। বন্যায় লক্ষ্মীপুরে সুপেয় পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। জেলার প্রায় ৯০ শতাংশ টিউবওয়েল পানির নিচে তলিয়ে গেছে। সপ্তাহ পেরোনো এই বন্যায় এসব জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫৫ লাখের বেশি মানুষ। দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাত কমে আসায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত আছে। এর মধ্যে নোয়াখালীতে টানা বৃষ্টি ও উজানের পানিতে সৃষ্টি হওয়া ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এবারের বন্যায় কুমিল্লার ১৪টি উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। এতে জেলায় কৃষি খাতে ৮৪৮ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ভারি বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় সওজের প্রধান সড়ক ভেঙে দুই উপজেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সেইসঙ্গে দুর্গত এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্কেরও উন্নতি হচ্ছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান খান বলেন, আগামী কয়েকদিনে সামান্য বৃষ্টিপাত হতে পারে দেশের অধিকাংশ জায়গায়। ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। বৃষ্টি অনেকটাই কমে এসেছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগরে মাঝখানে বা মধ্য বঙ্গোপসাগরে এখনো একটি লঘুচাপ রয়েছে। তবে, এর প্রভাব পড়বে না দেশে। এটি আর শক্তিশালী হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ঘরবাড়ির পাশাপাশি তলিয়ে গেছে নলকূপ। তাই নিরাপদ পানি উঠছে না সেই নলকূপ দিয়ে। ফলে দুর্গত এলাকায় এখন পানির জন্য হাহাকার চলছে। তবে যেসব এলাকায় ত্রাণ পৌঁছায়, সেখানে কিছুটা বোতলজাত পানির দেখা পান বন্যার্তরা। যদিও তা একেবারে নগণ্য। এজন্য লোকজনও খুব হিসাব করে পানি পান করছেন। বিশুদ্ধ পানির সংকটের পাশাপাশি বাড়ছে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়াজানিত রোগ। বেড না পাওয়ায় হাসপাতালের মেঝে ও চিকিৎসকের চেম্বারের সামনে ঠাঁই নিয়েছে রোগীরা। এ ছাড়া হাসপাতালে প্রচুর সাপে কাটা রোগীও আসছে।

এদিকে দেশে চলমান বন্যায় ১১ জেলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫২ জনে দাঁড়িয়েছে। বৃহস্পতিবার চলমান বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী রেজা এ কথা বলেন। তিনি বলেন, বন্যায় মোট ৫২ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে ৩৯ জন পুরুষ, ৬ জন নারী ও ৭ শিশু রয়েছেন। এর আগে বুধবার পর্যন্ত মোট মৃতের সংখ্যা ছিল ৩১ জন। এই ৫২ জনের মধ্যে কুমিল্লায় ১৪, ফেনীতে ১৭, চট্টগ্রামের ৬, খাগড়াছড়িতে ১, নোয়াখালীতে ৮, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১, লক্ষ্মীপুরে ১, কক্সবাজারের ৩ ও মৌলভীবাজারে একজনের মৃত্যু হয়েছে। মৌলভীবাজারে একজন নিখোঁজ রয়েছেন।
কে এম আলী রেজা বলেন, সিলেট জেলা থেকে প্রাপ্ত আজকের তথ্য মোতাবেক বন্যার পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতি হয়েছে। ৬৮ উপজেলা বন্যা প্লাবিত এবং ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়ন বা পৌরসভা ৪৯২টি। ১১ জেলায় মোট ১০ লাখ ৭২ হাজার ৫৭৯ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ৫৪ লাখ ৮০ হাজার ৪৬৩ জন।
পানিবন্দি লোকদের আশ্রয় দিতে মোট ৩ হাজার ৪০৩টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে মোট ৫ লাখ ২ হাজার ৫০১ জন লোক এবং ৩৬ হাজার ৪৪৮টি গবাদি পশুকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। ১১ জেলার ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য মোট ৫৯৫টি মেডিক্যাল টিম চালু রয়েছে।
বন্যা উপদ্রুত এলাকায় সরকারি-বেসরকারিসহ সব পর্যায় থেকে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সংগৃহীত মোট এক লাখ ৪ হাজার ১০০ প্যাকেট শুকনা খাবার, কাপড় ও পানি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মাধ্যমে বন্যাকবলিত এলাকায় পাঠানো হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। বন্যাকবলিত জেলাগুলোতে মোবাইল ও টেলিফোন যোগাযোগ পুনঃস্থাপন করা হয়েছে। বন্যা পরবর্তী পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব রোধে সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।

এ ছাড়া ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ফারাক্কা ব্যারাজের গেট খুলে দেওয়ার তিন দিন পর রাজশাহীতে পদ্মা নদীর পানির উচ্চতা বেড়েছে ৪ সেন্টিমিটার। বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় রাজশাহী শহরের বড়কুঠি পয়েন্টে পানির উচ্চতা রেকর্ড করা হয়েছে ১৬ দশমিক ৩৪ সেন্টিমিটার।

নোয়াখালী:
নোয়াখালীতে ত্রাণ বঞ্চিতদের হাহাকারে ভারি আকাশ-বাতাস। ত্রাণ বঞ্চিতদের হাহাকার চলছে নোয়াখালীতে। জেলার ৮ উপজেলায় ভয়াবহ বন্যার উন্নতি হচ্ছে না। এই বন্যায় দুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়েছে বিভিন্ন ট্রাস্ট ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। বন্যার শুরু থেকেই বন্যাদুর্গত মানুষের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হলেও পৌঁছাচ্ছে না প্রত্যন্ত দুর্গম এলাকায়। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার ঘাটতির কারণে পানি নামছে ধীরে।
আকস্মিক বন্যার পানি সাধারণত দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে নেমে যায়। কিন্তু ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে দেশের নোয়াখালী অঞ্চলে। নোয়াখালী জেলায় আকস্মিক বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে এক সপ্তাহের বেশি সময় হলো। পানি কমছে, তবে তা ধীরগতিতে। বিপুল সংখ্যক মানুষ এখনো পানিবন্দি। বুধবার রাতে নদী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বন্যার পানি দ্রুত না নামার কারণ এ অঞ্চলের ভূমিরূপ ও পানি সরে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট ব্যবস্থা না থাকা।
প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. মুনসুর রহমান বলেন, নোয়াখালী এবং সংলগ্ন এলাকায় সাম্প্রতিকালে অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ নানা কাজে ভূমি পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। ফলে ওই এলাকার পানি নিষ্কাশনের গুরুত্বপূর্ণ অনেক খাল এবং নিষ্কাশন নেটওয়ার্ক আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যে কারণে পানি নামতে দেরি হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।

দেশের পূর্বাঞ্চলের নোয়াখালীসহ আশপাশে কয়েকটি জেলার ভূমি মূলত সমতল ও নতুন পলি দিয়ে গঠিত। মমিনুল হক সরকার বলেন, নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুরের ভূমি সমতল ও নরম হওয়ায় সেখানে বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে থাকছে। গত তিন যুগে সেখানে বড় বন্যা হয়নি। ফলে বন্যার পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়নি। তিনি বলেন, ‘আমাদের এবারের বন্যা থেকে শিক্ষা নিয়ে ওই এলাকায় পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

শিশু খাদ্য, খাবার সুপ্রেয় পানির জন্য দীর্ঘ ১ সপ্তাহের অধিক সময় হাহাকার চলছে জেলার ৮টি উপজেলায়। বুধবার পর্যন্ত ১২ লাখ ৭ হাজার ৪২৯টি পরিবার পানিবন্দি ছিল।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, দেশের পূর্বাঞ্চলের বেশির ভাগ নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। কারণ ফেনী ও কুমিল্লায় এবং উজানে ভারতের ত্রিপুরায় বৃষ্টি কমে এসেছে। তবে ২৯-৩০ আগস্টের মধ্যে ভারতের ত্রিপুরা ও বাংলাদেশের নোয়াখালীর পার্শবর্তী জেলায় আবারও বৃষ্টি শুরু হতে পারে। তবে তা এর আগের বন্যা সৃষ্টিকারী বৃষ্টির মতো অতটা প্রবল না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

এদিকে জেলার প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষই পানির নিচে। মানবেতর জীবন যাপনে স্থানীয়রা। মারাত্মক খাদ্য সংকটে রয়েছে জেলার লাখ লাখ পানিবন্দি মানুষ। বুধবার রাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, অতীতের রেকর্ড ভঙ্গ করে পানি হু হু করে বাড়ছে। বিভিন্ন এলাকায় খাবার পেয়ে খুশি। তবে বেশি খুশি হয়েছেন পানি পেয়ে।
বাসাবাড়ির নিচতলা এখনো পানিতে ডুবে আছে। গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, ‘পানি নেমে গেলেও আমরা এখনো মানবেতর জীবন যাপন করছি। এর আগেও আমরা ত্রাণ পেয়েছি, তবে তা পরিমাণে খুবই কম।’ বুধবার নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী। ত্রাণবাহী নৌকা দেখে এগিয়ে এলেন প্রবীণ এক ব্যক্তি। ত্রাণের প্যাকেট হাতে পেয়ে প্রবীণ এই ব্যক্তি জানালেন, সাত-আট দিন ধরে পরিবারসহ বাড়িতে পানিবন্দি হয়ে আছেন। ঘরে খাবার নেই।

কাজেও যেতে পারছেন না। তাই সকালে বেরিয়েছিলেন কাজ আর খাবারের খোঁজে। যে ত্রাণ পেলেন তাতে অন্তত দুই-তিন দিন স্ত্রী-সন্তান নিয়ে দুবেলা খেতে পারবেন। উনার মতো ত্রাণের মতো নৌকা দেখে দূর থেকে এগিয়ে আসেন আরও কয়েক বন্যার্ত, তারা বলেন, এলাকার সব মানুষ পানবন্দি অবস্থায় রয়েছে কয়েক দিন ধরে। ঘর থেকে কেউ বের হতে পারে না। দুই দিন ধরে শুকনা খাবার খেয়ে আছে, এমন অবস্থায় ত্রাণ পেয়ে স্বস্তি ফিরে পেলাম। আল্লাহ আপনাদের ভালো করবে।
এদিকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে ত্রাণ পৌঁছায়নি। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর তালিকা নেওয়ার দ্রুত চেষ্টা করা হচ্ছে, পূর্ণ তালিকা হাতে পাওয়ার পরপরই দুর্গত এলাকায় ত্রাণ পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হবে। বৃহস্পতিবার এসব কথা বলেছেন জেলার ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা।
আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ধীরে ধীরে ফিরছে বন্যার্তরা। মৃত্যুর হার বেড়েছে, এখনো পানিবন্দি লাখ লাখ পরিবার। ক্ষতিগ্রস্তরা বসতভিটা নিয়ে হতাশায়। ঘরে থাকার মতো অবস্থা নেই। ঘর থেকে পানি সরলেও উঠানে রয়েছে। ঘরের ফ্রিজ ও ইলেক্ট্রনিক্সের ব্যবহৃত আসবাবপত্র ঘরের মেজের পানিতে ভাসছে। এতদিনের ঘরের ধ্বংসযজ্ঞ দেখে অনেকেই বুক ফেটে কান্না করছেন। জেলার ৮টি উপজেলায় হাজার হাজার ঘরবাড়ি, কৃষিজমি, চিংড়ির খামার, পুকুর, ডোবা-সবকিছু তলিয়ে গেছে। এমন ক্ষত দীর্ঘ সময় বয়ে বেড়াতে হবে তাদের। অনেকেই বলছেন, ‘বন্যার পানি নাইমছে, কিন্তু জীবন তছনছ করি গেছে। ঘরে থাকা কাপড়চোপড় সব পানি আর কাদায় নষ্ট হয়ে গেছে। এখন শুধু গায়ের পোশাকটাই একমাত্র সম্বল।
ঋণ পরিশোধ আর ঘর ঠিক করার পাশাপাশি আগামী দিনে সংসারের খরচ চালানোর দুশ্চিন্তায় এখানকার বাসিন্দারা। এদিকে এক সপ্তাহ পরও অনেকে পানিবন্দি স্বজনের খোঁজ পাচ্ছেন না।

লক্ষ্মীপুর:
বন্যা স্থায়ী রূপ নেওয়ার ফলে সাপের উপদ্রব বেড়েছে। প্রতিদিনই আসছে জেলা সদর হাসপাতালে সাপে কাটা রোগী। সন্ধ্যা পর্যন্ত সদর হাসপাতালে নারী-পুরুষ ও শিশুসহ একদিনে এসেছে ১৫ জন রোগী। বন্যার শুরু থেকে এ পর্যন্ত ৮০ জন সাপে কাটা রোগী জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। প্রতিদিনই বাড়ছে এ সংখ্যা। একই সঙ্গে বাড়ছে নিউমোনিয়া এবং ডায়রিয়াজনিত অন্যান্য রোগীর সংখ্যাও। হাসপাতালে মেঝে, চিকিৎসকের চেম্বার সামনে ঠাঁই নিয়েছেন রোগীরা।
সদর হাসপাতালের ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল অফিসার ডা. জয়নাল আবেদিন জানিয়েছেন অন্যান্য রোগীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রতিদিনই সাপে কাটা রোগীর সংখ্যা হাসপাতালে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৃহস্পতিবার একদিনে এসেছে ১৫ জন সাপে কাটা রোগী। তিনি বলেন, চারদিকে স্থায়ী বন্যার মাছ ধরার জন্য ফলে জাল দেওয়া এবং অন্যান্য সমস্যার ফলে সাপের অবাধ চলাচলে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে।

চাঁদপুর:
কুমিল্লা, ফেনী ও নোয়াখালী জেলার বানের পানি চাপে চাঁদপুরের শাহরাস্তি এবং কচুয়া উপজেলার লক্ষাধিক বাসিন্দা এক সপ্তাহের অধিক সময় পানিবন্দি হয়ে আছেন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কচুয়া উপজেলার আশরাফুর ইউনিয়নের ভবানিপুর, সানন্দকড়া, রসুলপুর, পিপলকরা ও শাহরাস্তি উপজেলার রায়শ্রী উত্তর ইউনিয়নের উনকিলা, রায়শ্রী, সন্ডিপাড়া দাদিয়াপাড়া ও দক্ষিণপাড়া ঘুরে দেখা যায় বহু ঘরবাড়ি তলিয়ে আছে।
একই সঙ্গে তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ফসলি জমি। বিশেষ করে গবাদি পশু ও হাঁস মুরগি নিয়ে লোকজন খুবই বিপাকে রয়েছেন।
এসব এলাকায় দুর্গত লোকদের জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কিছু সহায়তা দিলেও রান্না বান্না করে খাওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই। শুরুতে পানিবন্দি লোকজন কিছু শুকনো খাবার পেলেও এখন চলছে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট।
শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইয়াসির আরাফাত জানান, বানের পানিতে এখন পর্যন্ত পানিবন্দি আছে ৫৫ হাজারের অধিক মানুষ। সাড়ে তিন হাজার লোক আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে। তাদের জন্য শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিভিন্ন সংগঠনও তাদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছে।
কচুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এহসান মুরাদ জানান, পানিবন্দি এলাকায় ইতোমধ্যে কিছু লোকজন আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছে। তাদের জন্য শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ফেনী:

সাম্প্রতিক বন্যায় ফেনী জেলা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে জেলার ছাগলনাইয়া, পরশুরাম, ফুলগাজী, সোনাগাজী, ফেনী সদর ও দাগনভূঞা উপজেলা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। বেশিরভাগ বাড়িঘর ও দোকানপাট ডুবে গেছে। এমনকি একতলা পর্যন্ত পাকা বাড়ি তলিয়ে গেছে পানির নিচে। স্রোতের তোড়ে শত শত মুরগির খামার পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে দীর্ঘ সময় লাগবে খামারিদের। ২৩ লাখ ৪ হাজার ৪১০টি হাঁস-মুরগির মৃত্যু হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বন্যা-পরবর্তী সময়ে তাদের বিশেষ প্রণোদনা না দিলে এ খাতটি যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তেমনি মানবেতর জীবনযাপন করতে হবে হাজার হাজার মানুষের। জেলা প্রাণিসম্পদের তথ্য মতে, ১৭ লাখ ৩১ হাজার ৮১০টি মুরগি ও ১ লাখ ৯৬ হাজার ৪৭২টি হাঁস মারা গেছে। সব মিলিয়ে মৃত পশুপাখির মোট ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ৩০২ কোটি ৬৭ লাখ ৯২ হাজার টাকা। এক হাজার ৬২৩টি হাঁস-মুরগির খামারের ১০ কোটি ৯৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে ধারণা করা হচ্ছে, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এর চেয়েও বেশি।

ফেনী সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. মো. শহিদুল ইসলাম খোকন জানান, ‘ফেনীতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রাণিসম্পদ খাতে। যা পুষিয়ে উঠতে অনেক সময় লাগবে। শুধু মাংস নয় দুধ, ডিম ইত্যাদি থেকে ফেনীবাসীকে বঞ্চিত হতে হবে।

কুমিল্লা:
ভয়াবহ বন্যায় কুমিল্লার ১৪টি উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। এতে কুমিল্লা জেলায় কৃষি খাতে ৮৪৮ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ বন্যায় ৬৩ হাজার ৭৯৪ হেক্টর ফসলি জমি তলিয়ে যায়। গত বুধবার দুপুরে কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপপরিচালক আইয়ুব মাহমুদ বলেন, ১৪ উপজেলার বৃষ্টির পানি ও বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির এটি প্রাথমিক তালিকা। এর পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। চূড়ান্ত পরিমাণ পানি একেবারে নেমে যাওয়ার পরে পরবর্তী সময়ে পুরো তথ্য জানানো হবে।
কুমিল্লায় ফসলের মধ্যে ২২৩ কোটি ৪১ লাখ টাকার রোপা আমন বীজতলা, ২৬৯ কোটি ৯৮ লাখ ৪৩ হাজার টাকার রোপা আমন, ৪৯ কোটি ৬৫ লাখ টাকার শাকসবজি, ২৯৭ কোটি ৮৫ লাখ ৭২ হাজার টাকার রোপা আউশ এবং ৭ কোটি ৬৮ লাখ টাকার আখ ফসলের ক্ষতি হয়েছে।
কুমিল্লার মেঘনা, হোমনা ও চান্দিনা ব্যতীত অবশিষ্ট ১৪টি উপজেলার কবলিত ইউনিয়নের সংখ্যা ১২৫টির মধ্যে ৭২৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে লোকসংখ্যা রয়েছে ১০ লাখ ৬১ হাজার ৬৪৪ জন।
কৃষি ও মৎস্য খাতের পাশাপাশি প্রাণিসম্পদেরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জেলায় এ খাতে মোট ক্ষতির পরিমাণ প্রাথমিক তথ্য মতে ৩০৮ কোটি টাকা, যা আরও বাড়তে বা কমতে পারে। এবারের ভয়াবহ বন্যা অতীতের যে কোনো ক্ষতিকে ছাড়িয়ে গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে কুমিল্লা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

 

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments