লেবানন-ইসরায়েল সীমান্ত এলাকাজুড়ে রোববার ভোররাত পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়েছে ইরানপন্থী সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলি বাহিনী। যদিও গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েলি হামলা শুরুর পর থেকেই দেশটির সঙ্গে বিরোধে জড়িয়েছে হিজবুল্লাহ। তবে আজকের এ হামলা ছিল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। দেখে নেওয়া যাক এদিন ভোরে কী ঘটেছে।
কী ঘটেছে:
আজ ভোররাতে দক্ষিণ লেবাননে হামলা চালায় ইসরায়েলের যুদ্ধবিমান। ইসরায়েল বলছে, তাদের ওপর হামলা চালানোর জন্য হিজবুল্লাহর রকেট উৎক্ষেপণ ব্যবস্থাগুলো তৈরি করা হচ্ছিল। তাই আগাম সতর্কতা হিসেবে এ হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর ভাষ্যমতে, তারা জানতে পারে, আজ ভোর পাঁচটার দিকে মধ্য ইসরায়েলে শত শত ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালাবে হিজবুল্লাহ। তাই এর আধা ঘণ্টা আগে ১০০টি যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে লেবাননে হিজবুল্লাহর ওপর হামলা চালানো হয়।
এদিকে হিজবুল্লাহ জানিয়েছে, গত মাসে তাদের নেতা ফুয়াদ শুকরকে হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে উত্তর ইসরায়েলে রকেট ও ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে।
হতাহত:
লেবাননের বার্তা সংস্থা এনএনএ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, দেশটির দক্ষিণে কাসিমিয়া এলাকায় ইসরায়েলের ড্রোন হামলায় একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। পরে খিয়াম শহরে ইসরায়েলের বিমান হামলায় একজন নিহত হন। অন্যদিকে ইসরায়েলের আকরে শহরে হিজবুল্লাহর হামলায় কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
কোথায় হামলা:
হিজবুল্লাহ জানিয়েছে, তারা ইসরায়েলের ১১টি স্থাপনায় আঘাত হানতে সক্ষম হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মেরোন সামরিক ঘাঁটি ও গোলান মালভূমিতে চারটি স্থাপনা। অপর দিকে ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা হিজবুল্লাহর হাজার হাজার রকেট উৎক্ষেপণ ব্যবস্থায় হামলা চালিয়েছে।
কি হচ্ছে:
পরিস্থিতি অন্তত এ মুহূর্তে শান্ত রয়েছে বলে মনে হচ্ছে। নিজেদের রকেট উৎক্ষেপণ ব্যবস্থায় ইসরায়েলের হামলার সত্যতা নাকচ করেছে হিজবুল্লাহ। বলেছে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক হামলার ‘প্রথম ধাপ’ সফলভাবে শেষ করেছে তারা।
হিজবুল্লাহর হামলার পর ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে নিরাপত্তাসংক্রান্ত বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। হামলার পর দেশটির বেন গুরিওন বিমানবন্দর কয়েক ঘণ্টা বন্ধ রাখা হয়।
আজ হামলা কেন:
হিজবুল্লাহ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, রোববার ছিল ইমাম হোসাইনের (রা.) মৃত্যুবার্ষিকী পরবর্তী ৪০তম দিন। শিয়া মতাবলম্বীদের কাছে দিনটি ‘আরবাইন’ নামে পরিচিত। একে শহীদ দিবস হিসেবে পালন করেন তাঁরা। এ কারণেই হামলার জন্য দিনটিকে বেছে নেওয়া হয়েছে।
হিজবুল্লাহ-ইসরায়েল যুদ্ধ কি শুরু:
লেভান্ত ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক সামি নাদের বলেন, রোববার যে পাল্টাপাল্টি হামলা হয়েছে, তার মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ শুরু হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহ এমন কোনো পরিস্থিতি এড়ানোর চেষ্টা করছে।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাৎসের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলেছে, ইসরায়েল পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ চায় না। তবে পরিস্থিতি যে দিকে যাবে, সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবে।
সংঘাত বাড়ার ইঙ্গিত:
এই পাল্টাপাল্টি হামলা সংঘাত বাড়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষক সামি নাদের। তবে আল-জাজিরার সংবাদকর্মী জেইনা খোদর ভাষ্যমতে, হিজবুল্লাহর ওপর হামলা চালানোর ক্ষেত্রে ইসরায়েল ‘নিজেদের নিরাপত্তা’ ও ইসরায়েলের নাগরিকদের সুরক্ষার কথা বলছে। এর মধ্য দিয়ে এটাই বোঝা যায়, দেশটি আপাতত বড় আকারে সংঘাতে জড়ানোর দিকে হাঁটবে না।
সূত্র: আল জাজিরা